
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন নরওয়ের প্রতিমন্ত্রী। মঙ্গলবার (২০ মে) নরওয়ে সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী স্তিনে রেনাতে হোহেইম রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের প্রতি নরওয়ের অব্যাহত সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
সাক্ষাতকালে হোহেইম নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইউনাস গার স্তোরের পক্ষ থেকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান এবং বাংলাদেশ-নরওয়ে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আপনি নরওয়েতে সুপরিচিত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই আপনার ব্যাপারে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে কথা বলেন। আপনাদের মধ্যে বহু দিনের বন্ধুত্ব রয়েছে।
এসময় অধ্যাপক ইউনূস দুই দেশের মধ্যকার গভীর ও ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা স্মরণ করে বলেন, সংকটকালে নরওয়ে সবসময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় আপনাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
হোহেইম বহুপাক্ষিক সহযোগিতা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রতি নরওয়ের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার পাশে থাকতে আমরা এখানে এসেছি। আপনার কাঁধে যে দায়িত্ব, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশাও অনেক।
সাম্প্রতিক মাসগুলোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাইয়ের গণআন্দোলনে বহু প্রাণ হারিয়েছে এবং আমাদের অর্থনীতি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগের সরকার প্রতিবছর আনুমানিক ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচারের সুযোগ করে দিয়েছিল। ঋণগুলোকে উপহার হিসেবে ব্যবহার করা হতো আর আমরা পেয়েছি অগণিত অনাদায়ী বিলের বোঝা।
তিনি আরও বলেন, এই সকল কষ্টের মাঝেও বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে নিয়ে আশাবাদী। সদ্যসমাপ্ত বিডা সম্মেলনে বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানিগুলো (নরওয়ের কোম্পানিগুলোসহ) এখানে এসেছিল। তারা দায়বদ্ধতা থেকে নয় বরং আগ্রহ ও সম্ভাবনার প্রতি বিশ্বাস থেকে এসেছে।
প্রধান উপদেষ্টা মানবিক ইস্যু, বিশেষ করে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিয়ে নরওয়েকে আরও সহায়তা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এরা বাস্তব মানুষ, যাদের বাস্তব স্বপ্ন আছে। রোহিঙ্গা তরুণদের আশা দরকার। অনেকেই ৭ বা ১০ বছর বয়সে এসেছিল, এখন তারা কিশোর। তারা ক্যাম্পেই বড় হয়েছে। প্রতিদিন আরও শিশু জন্ম নিচ্ছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে। তারা নিজেদের বাড়ি ফিরতে চায়, কিন্তু একটি অচল অবস্থায় আটকে আছে। আমরা যেন তাদের ভুলে না যাই।
হোহেইম এই মানবিক সংকটের ব্যাপকতা স্বীকার করেন এবং নরওয়ের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ যেভাবে এই সংকটের নেতৃত্ব দিচ্ছে আমরা তা গভীরভাবে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে দেখি। আমরা আমাদের সম্পর্ককে কেবল উন্নয়ন সহযোগিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না বরং আরও বিস্তৃত, গতিশীল অংশীদারত্বে পরিণত করতে চাই।
এই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. মোশারফ হোসেন।