অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

0
10
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া
বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে সহযোগিতা আরও গভীর করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থন থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের।
 
গতকাল বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
 
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘ সদর দপ্তরের নির্ধারিত সভাস্থলে গতকাল স্থানীয় সময় সকালে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় আধা ঘণ্টার বৈঠকে কোন প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, সেই পরিস্থিতির আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কারপ্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
 
প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বলা হয়েছে, ড. ইউনূসের সঙ্গে ব্লিঙ্কেনের বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান, সন্ত্রাস দমন, শ্রমবিষয়ক সংকট, পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
 
ড. ইউনূস ও ব্লিঙ্কেনের বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে জানান, বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন ড. ইউনূস ও ব্লিঙ্কেন। সেখানে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ অব্যাহত থাকা নিশ্চিত করতে সংস্কারের গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সহায়তার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, যেখানে অংশগ্রহণমূলক, গণতান্ত্রিক এবং বাংলাদেশির ন্যায়সংগত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে। ড. ইউনূস ও ব্লিঙ্কেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শ্রম অধিকারের প্রতি সম্মান, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মানবাধিকার রক্ষা এবং রোহিঙ্গা ও সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষায় শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ার গুরুত্বের বিষয়টি আলোচনা করেন।
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এ সময় ড. ইউনূস জুলাই–আগস্ট বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্র নিয়ে আর্টবুক ‘আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ উপহার দেন ব্লিঙ্কেনকে। গতকাল নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে, ছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্স হ্যান্ডল থেকে
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্র সংস্কারে একেবারে শূন্য থেকে যাত্রা করতে হচ্ছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, এই পরিস্থিতিতে তিনি চিরাচরিত কায়দায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফর করছেন না। বাংলাদেশের সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চান তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কিন্তু উষ্ণ সাক্ষাৎ ড. ইউনূসকে উদ্দীপ্ত করে তুলেছে। সংস্কারের উদ্যোগের প্রতি বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সহায়তার কথা বলেছে। এখন এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকেও জোরালোভাবে পাশে চান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
 
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ড. ইউনূসের সঙ্গে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ায় ড. ইউনূসের প্রশংসা করেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। যুক্তরাষ্ট্র সব সময় তাঁর কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশের সামনের দিনগুলোয় তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সংস্কারপ্রক্রিয়ায় যেখানে যেখানে সুযোগ আছে, যুক্তরাষ্ট্র সেখানে সহযোগিতা করবে।
 
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক একাধিক কূটনীতিক বলেছেন, গত তিন দিনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পর যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (ইউএসআইডি) প্রশাসক সামান্থা পাওয়ার ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে ড. ইউনূসের আলোচনা দুই দেশের ভবিষ্যতের স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ড. ইউনূসের সঙ্গে বিরল বৈঠকে অংশ নিয়ে জো বাইডেন সারা বিশ্বের কাছে বার্তা দিয়েছেন, বাংলাদেশের পাশে জোরালোভাবে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া সামান্থা পাওয়ার ও অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে সহযোগিতার সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, এই আলোচনাগুলোর মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য দেশ এবং জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোকে সামনের দিনগুলোয় বাংলাদেশকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে আস্থা জোগাবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.