বিরতি ভেঙে আবার অভিনয় শুরু করলেন সাদিয়া জাহান প্রভা। সম্প্রতি শুটিং শেষ করলেন ‘তোমারও বিরহে রহিব বিলীন’ নামের একটি খণ্ডনাটকের। এই নাটকসহ অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলল বিনোদন
দীর্ঘদিন পর শুটিং করলেন। কেমন হলো?
আলহামদুলিল্লাহ। আমার শুটিং খুব ভালো হয়েছে। আমি এখন একসঙ্গে দু–তিনটি কাজ করি। এরপর চার–পাঁচ মাস বিরতি নিই। আমি এখন কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে দু–তিনটি ভালো কাজ করি। এদিকে আবার মানহীন কাজ করলে নিজের সঙ্গে নিজেরও পোষায় না। অভিনয়ের জন্য অনেক স্ক্রিপ্টই তো আসে, কিন্তু অনেক সময় নিজের সঙ্গে আপস করতে পারি না। এরপরও যাচাই–বাছাই শেষে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে মনে হয় যে এবার আমার কাজ করতে হবে।
কেন এমনটা মনে হয়?
আমি তো অভিনয় ছাড়া কোনো কাজ শিখিনি। ঘুরতে যাওয়ার আগে তো টাকা লাগে। নিজের টাকায় ঘোরাঘুরির আনন্দটাই অন্য রকম। (হাসি) তাই দু–তিনটি কাজ করলেই একটা ভালো ট্যুর দেওয়া যায়। ভালো তো এটা।
তার মানে ধরে নিতে পারি, আবার কোথাও ঘুরতে যাচ্ছেন?
হুম, হতে পারে। এখন পর্যন্ত আসলে পরিকল্পনাটা সে রকম আছে। আরও দু–একটা কাজ করে উড়াল দেব।
কিছুদিন আগে দেখলাম ভিয়েতনাম গেলেন, এবারের গন্তব্য তাহলে কোথায়?
এখনই কিছু বলব না। বললেই কেন জানি ক্যানসেল হয়ে যায়। আমি আবার মানুষের নজর লাগাতে বিশ্বাস করি। এমনও হয়েছে, গত অক্টোবরে আমাদের একটা ফ্যামিলি ট্যুর ছিল, যেদিন ফ্লাইট, তার ঠিক এক দিন আগে ক্যানসেল হয়েছে। কারণ, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমার ভাইয়ের পরীক্ষা শেষ হয়নি। এর আগেও কয়েকবার কারণ ছাড়াই এ রকম ঘটনা আমার জীবনে ঘটেছে। তাই কেউ যখন এখন আমাকে জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছি, বলি যে যাচ্ছি, তবে কবে কোথায় যাচ্ছি আগেভাগে কিছুই বলতে পারব না।
‘নজর লাগতে পারে’—এ ধরনের বিশ্বাস আপনার মধ্যে আগে থেকেই ছিল?
না, বছর তিনেক ধরে আমি এসব বিশ্বাস করি। নজর লাগায় আমার অনেক কিছু ভেস্তে গেছে। এটাও ভাবি, যা চলে গেছে তা হয়তো সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা। ওটা নিয়ে কোনো আফসোস নেই। স্রষ্টা যেটা আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছেন, সেটা হয়তো ভালো মনে করেই নিয়ে গেছেন।
আবার শুটিং প্রসঙ্গ, দীর্ঘদিন পর অভিনয়ে ফিরে কেমন লাগল শুটিংয়ের পরিবেশ?
শুটিংয়ের পুরো টিম এবং পরিচালক সুব্রত রিপন ও অমিতাভ রানা হচ্ছে আমার অনেক অনেক সহযাত্রী। এমনকি প্রোডাকশনের যারাই ছিল, তারাও আমার খুব আপন। একটা সময় ছিল, তাদের সঙ্গে প্রতিদিনই দেখা হতো। ওরা জানে, ওদের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। তাদেরও আমার প্রতি একই রকম ধারণা রয়েছে, আত্মবিশ্বাস আছে। পুরোনো টিমের সঙ্গে শুটিং, তাই কোনো কষ্ট হয়নি। কাজটা করে খুবই আরাম হয়েছে। পুরো শুটিং পরিবেশে আমার কমফোর্ট জোন ছিল চমৎকার।
একটা সময় এত বেশি অভিনয় করতেন, হঠাৎ একদমই অনিয়মিত হলেন। অভিনয় কমিয়ে দেওয়ার পেছনে কোন যুক্তি আপনার?
একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে বলতে পারি, অনেক না–বলা অভিযোগ, না–বলা দুঃখ আছে। অনেক মানুষের দেওয়া অকারণ অপমান হজম করেছি—এসব কারণে আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। এই সেক্টরে আমি যখন কাজ করতে এসেছিলাম, তখন মনে করেছিলাম, পা ফেলতে হবে অনেক স্মার্টলি। এতটুকুই। সেই আমি একটা সময় নানা রকম পলিটিকসের শিকার হব, মিডিয়াতে কাজ করলেই মেয়েটা খারাপ বা মেয়েটাকে অনেক কথা শুনতে হবে—এমনটা ভাবিনি। আরও কিছু বিষয় আছে।
কী সেসব বিষয়?
অনেক বড় বিষয় হচ্ছে, কয়েক বছর ধরে সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন। অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে ইউনিটে থাকা প্রায় সবারই ফেসবুক পেজ, টিকটক অ্যাকাউন্ট এবং ইউটিউব প্ল্যাটফর্ম আছে। এসবের কারণে শুটিং সেটে স্মার্টফোনের অপব্যবহার হয়। এর বাইরে অনেকে শুটিং দেখতেও আসেন। যদিও ইদানীং কিছুটা কঠোর হয়েছে ঠিকই কিন্তু পুরোপুরি নয়। আমার এবারের শুটিং সেটে সবাইকে বলা ছিল, মোবাইলের ক্যামেরা ব্যবহার করা যাবে না। কারও ছবি তুলতে ইচ্ছে করলে, অনুমতি নিতে হবে। অথচ আগে দেখতাম, নাটক–টেলিছবি প্রচারের আগে দূর থেকে ক্যাপচার করা একটা ভিডিও ক্লিপ টিকটক, ফেসবুক, ইউটিউবে ছাড়া হয়েছে। অপেশাদার ওরা তো আর জানে না, ক্যামেরা কেমন করে ধরতে হয়, দেখা গেছে ভালগার ওয়েতে ধরছে। ওসব দেখে আমি কষ্ট পেয়েছি। আমি এখানে কাজ করতে আসছি। অভিনয় দক্ষতা দেখাতে আসছি। আমি এখানে আমার প্রোপশন (অঙ্গসৌষ্ঠব) দেখাতে আসিনি। এটা আমাকে অনেক বেশি মানসিকভাবে পীড়া দিয়েছে। এর বাইরে আরও কিছু ব্যক্তিগত ইস্যু ছিল।
কী সব ব্যক্তিগত ইস্যু?
আমি যাকে কিংবা যাদের সহশিল্পীর চেয়ে ভালো বন্ধুও মনে করতাম, তাদের কিছু কর্মকাণ্ডও আমাকে আহত করেছে। এমনও দেখেছি, কোনো কোনো সহশিল্পী আছেন, তাঁদের ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউব আছে, ভিউ পাওয়ার জন্য শুটিং সেটে এমন কিছু অ্যাকটিভিটি করেন, যেটার কোনো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পর্যন্ত মনে করেননি! আমারই একজন সহকর্মীকে প্রায়ই দেখেছি, অনুমতি ছাড়াই এমন কর্মকাণ্ড। তাঁর সহকারী ক্যামেরা চালাচ্ছেন, অথচ সেটা শুটিংয়ের কিছু না, যেটার জন্য বিব্রতবোধ করেছি! এসব যে সেই সহশিল্পী ইচ্ছাকৃত করতেন, তা ভিডিও ক্লিপগুলো প্রকাশের পর বোঝা যেত। ওই সহশিল্পীকে প্রায় সময় আরও অনেককের সঙ্গে এমন আচরণ করতে দেখি। এসব ভিডিও ক্লিপ ইউটিউব বা টিকটকে দেখতাম, আমাকে মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত করেছে।
এবার অন্য প্রসঙ্গ, আপনি ফ্যাশন ডিজাইনে পড়েছেন আপনি। ওই বিষয়ে কিছু করার পরিকল্পনা আছে কি?
এটা নিয়ে আমার আক্ষেপ আছে। আমি কিন্তু বরাবরই প্র্যাকটিক্যালে বেশি নম্বর পেতাম, এ পেতাম। প্রতিবারই ভেবেছি নিজের একটা ফ্যাশন লাইন চালু করব। হয়নি। দেখি সামনে করতে পারি কি না। এখন আবার মেকআপ নিয়ে পড়তে ভালো লাগে। সারাক্ষণ ইউটিউবে মেকআপ টিউটোরিয়াল বানাই। এগুলোর প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। আমার রুমের মধ্যে একটা মেসেজ বোর্ড দিয়ে রেখেছি, ডু হোয়াট ইউ লাভ। প্রতিবার ঘরে ঢোকার সময়ই এটা আমার চোখে পড়ে। আমার জীবনের এখনকার লক্ষ্য হচ্ছে, যা ভালোবাসব তা–ই করব, যতক্ষণ না এটা অন্যের জন্য ক্ষতিকর হয়।
নতুন কাজের খবর বলুন।
আরও কয়েকটা কাজের ব্যাপারে কথা চলছে। কয়েকটি চিত্রনাট্য পড়ছি। শুটিং শুরুর আগে এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না।
ঢাকা