
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে প্রশাসনের শীর্ষ কিছু পদে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের বসিয়েছিলেন। ঊর্ধ্বতন এসব সাবেক সেনা কর্মকর্তা নাইন-ইলেভেনের পর ইরাক ও আফগানিস্তানে নেতৃস্থানীয় পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এখন ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন মাঠপর্যায়ের একদল সাবেক সেনা এবং তরুণ কর্মকর্তা। তাঁরা আমেরিকার তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের (জিডব্লিউওটি) পরিকল্পনা করার পরিবর্তে যুদ্ধ পরিচালনা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিলেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস এবং জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড—ইরাক ও আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালনকালে তাঁরা সবাই নিম্ন থেকে মধ্যম স্তরের সেনাসদস্য ছিলেন। শুধু ওয়ালৎসের বয়স ৫০ বছরের বেশি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর বিশেষ শাখা গ্রিন বেরেটের সদস্য ছিলেন।
উল্লিখিত ব্যক্তিদের নিয়ে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ গঠিত হয়েছে। তাঁরা একটি তরুণ প্রজন্মের সাবেক সেনাসদস্যদের প্রতিনিধিত্ব করেন, যাঁদের প্রায় সময় মোহমুক্ত, প্রথাগত ইনস্টিটিউশনের বিষয়ে সন্দিহান বলে মনে করা হয়। এসব সেনার অনেকে মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যের অমীমাংসিত যুদ্ধে বছরের পর বছর (ইনস্টিটিউশন) তাঁদের ব্যর্থ করা হয়েছে।
ট্রাম্প যাঁদের নিয়োগ দিয়েছেন তাঁদের অনেকে, বিশেষ করে গ্যাবার্ড ও হেগসেথ (কংগ্রেসের) সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইকারী কর্মকর্তাদের তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁরা মন্ত্রী পর্যায়ের দায়িত্ব পালনের অযোগ্য।
হেগসেথ ও ভ্যান্স গত সপ্তাহে ব্রাসেলসে ন্যাটো এবং মিউনিখে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় নিজেদের বেশ ভালোভাবেই তুলে ধরেছেন। তাঁরা উভয়ে এমন সব কথাবার্তা বলছেন, যা ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে যায়। সাবেক সেনা কর্মকর্তা হেগসেথ ‘ইউরোপকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য নিজেদের দায়িত্ব’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ন্যাটো সদস্যদের কাছ থেকে তিনি প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
মেরিন কোরের সাবেক সদস্য ভ্যান্স (মিউনিখের নিরাপত্তা সম্মেলনে) ইউরোপীয় মিত্রদের উদ্দেশে একটি জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন। বক্তৃতায় তিনি রাশিয়া ও চীনের হুমকিকে এতটা গুরুত্ব দেননি। বাক্স্বাধীনতার দমন ও অতি ডানপন্থী দলগুলোর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সরকারকে অভিযুক্ত করেছেন তিনি।
‘মিথ্যা অজুহাতে যুদ্ধে পাঠানোর অভিযোগ’
কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান—উভয় পার্টির সদস্যরা স্বীকার করেছেন, বৃহত্তর সমাজের হতাশার জবাবে জিডব্লিউওটির সাবেক এসব সদস্য ও কর্মকর্তারা অনন্য রকমের শক্তিশালী বার্তাবাহক হতে পারেন।
ইরাক ও আফগানিস্তানে তিনবার দায়িত্ব পালনকারী সাবেক আর্মি রেঞ্জার ডেমোক্রেটিক প্রতিনিধি জেসন ক্রো বলেন, রাজনৈতিকভাবে বললে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ করা সাবেক সদস্যরা রাজনীতির বিষয়ে তুলনামূলক বেশি সন্দেহভাজন। আর তাঁরাই সেই সব মানুষ, যাঁরা উপলব্ধি করছেন যে অনেক ক্ষেত্রেই মিথ্যা অজুহাতে তাঁদের (যুদ্ধে) পাঠানো হয়েছিল।
‘স্যালুট ও আদেশ তামিল’
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে (তৎকালীন) বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত অনেক তিন ও চার তারকা জেনারেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এসব কর্মকর্তার মধ্যে প্রথম প্রতিরক্ষা সচিব জিম ম্যাটিস, জয়েন্ট চিফস চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি অথবা তাঁর চিফ অব স্টাফ জন কেলির কথা বলা যায়। তাঁদের তৎপরতা প্রায় সময় ট্রাম্পকে হতাশ করেছিল।
ট্রাম্প বলয়ের ঘনিষ্ঠ সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, হেগসেথ ও গ্যাবার্ডকে বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ হলো, তাঁরা জেনারেল ছিলেন না।
এই কর্মকর্তা বলেন, নিম্ন র্যাঙ্কের কর্মকর্তা ও তালিকাভুক্ত সেনাদের শীর্ষ পদে নিয়োগ দেওয়ার মধ্যে দিয়ে চার তারকার মতো প্রথাগত এলিটদের সরাসরি প্রত্যাখ্যান ট্রাম্পের জন্য কিছুটা সুবিধাজনক হবে। এসব কর্মকর্তা তাঁর (ট্রাম্পের) ধামাধরা হিসেবে কাজ করবেন।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) এমন মানুষ খুঁজছেন, যাঁরা তাঁকে স্যালুট ও তাঁর আদেশ তামিল করতে চান। এসব মানুষকে গত পাঁচ থেকে সাত বছর জীবিকার জন্য চাকরি করতে হয়েছে। বিপরীত দিকে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের, যাঁরা বিভিন্ন বোর্ডে ছিলেন এবং আয়েশ করে নানা সুবিধা নিয়েছেন।’
নতুন প্রজন্মের এসব সাবেক সেনাসদস্যকে সম্ভবত ন্যাটোর মতো ঐতিহ্যবাহী বহুজাতিক সামরিক জোটে কায়েমি স্বার্থ নেই, যা ট্রাম্পের আগের প্রশাসনের জেনারেলদের ছিল। তাঁরা ন্যাটোর স্বার্থ রক্ষা করতে চাইতেন।
সিএনএন