ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, পবিত্র ঈদুল আজহার দিন ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও মুসল্লিরা যাতে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন, সে জন্য সব রকমের ব্যবস্থা-প্রস্তুতি ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে। তাই অতিবৃষ্টি হলেও এবার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত জাতীয় ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তাপস।
২৯ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হবে। এদিন সকাল সাড়ে সাতটায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র। ঈদের দিন প্রতিকূল আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ঝড়বৃষ্টির কারণে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে যেন কোনো জলাবদ্ধতা না হয়, সেই প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন বলে জানান তাপস। তিনি বলেন, এ জন্য ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। মুসল্লিরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে-নিরাপদে ঈদের নামাজ এখানে আদায় করতে পারেন, তার সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় ঈদগাহের আশপাশের এলাকার সড়কেও অনেক মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন। তাই সব মিলিয়ে এখানে ৮০ হাজারের মতো মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন।
ঈদের জামাতের জন্য জাতীয় ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুত করার কাজ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১। সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, এবার জাতীয় ঈদগাহে দেশের অতিগুরুত্বপূর্ণ ৩৩০ জন ব্যক্তির নামাজ আদায়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ২৫০ জন ও নারী ৮০ জন। অতিগুরুত্বপূর্ণ এসব ব্যক্তির নিরাপত্তা অন্যদের চেয়ে আলাদা হবে। আর সাধারণ মুসল্লিদের ক্ষেত্রে ঈদগাহ ময়দানে ৩১ হাজার পুরুষ ও ৩ হাজার ৫০০ নারীর জন্য নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটির এক প্রকৌশলী বলেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নানা বয়সী মানুষ এই মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন। এ কারণে নিরাপত্তাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ময়দান প্রস্তুত করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ময়দানে দায়িত্ব পালন করবেন।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে একসঙ্গে ১৪০ মুসল্লি যাতে অজু করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা রেখেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
ঈদের দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও গরম থেকে মুসল্লিদের স্বস্তি দিতে এবার ময়দানে এয়ারকুলার ও ফ্যানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, পুরো ময়দানে ৬৫০টি সিলিং ফ্যান, ১৫০টি স্ট্যান্ড ফ্যান, ৪০টি মেটাল লাইট ও ৭০০টি টিউব লাইট বসানো হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত খাবার পানির ব্যবস্থা, ভিআইপিদের কাতারে জায়নামাজের ব্যবস্থা, ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা, নামাজের জন্য কার্পেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুত করতে ৮০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। তাঁরা বলছেন, প্রতিবছর এই ময়দান প্রস্তুত করতে ৮০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুতের কাজটি করছে পিয়ারু সরদার ডেকোরেটর নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে এই কাজের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন মো. মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ময়দান প্রস্তুত করতে এবার তাঁদের ২৩ দিন লেগেছে। প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ জন শ্রমিক কাজ করেছেন। বৃষ্টি থেকে মুসল্লিদের রক্ষায় ময়দানে প্রায় ১ হাজার ৯৫০টি তেরপল টানানো হয়েছে।