‘অংপুরোত (রংপুরে) দুইদিন সাঁতাও চলবে বাহে…। সউগ কাম-কাজ থুইয়া এই সাঁতাও দেকা নাগবে।’ তপ্ত দুপুরে বৃহস্পতিবার রংপুর নগরীর জেলা পরিষদের সামনে বিশ্রামরত রিকশাচালক নয়া মিয়া উচ্চস্বরে এভাবে অন্যদের বলছিলেন।
রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত বাংলা চলচ্চিত্র ‘সাঁতাও’ শুক্রবার থেকে দু‘দিনব্যাপী প্রদর্শন করা হবে স্থানীয় শিল্পকলা একাডেমিতে। এই খবরে ব্যাপক সাড়া পড়েছে রংপুর নগরজুড়ে।
বছরের কার্তিক মাসের কোনো কোনো সময় টানা সাতদিন ধরে ঝড়-বৃষ্টি চলে। বাড়ির বাইরে বের হওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ায় অভাবে ওই সময় প্রান্তিক পরিবারে নানা সংকট দেখা দেয়। বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস মূলত ঠিক মৌসুমের আগে শীতের আবহ তৈরি করে। রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় এই সময়টাকে বলা হয় সাঁতাও। এই সাঁতাওয়ের আবহ এখন ঠিক ততটা না থাকলেও ওই সময়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অভাব-দুর্ভোগসহ মাটির ঘ্রাণ ও এদেশের মানুষের যাপিত জীবনের সন্ধান মেলে ‘সাঁতাও’ ছবিতে।
চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি মুক্তি পাওয়া সাঁতাও ছবিটি নির্মাণ করেছেন খন্দকার সুমন। ছবিতে তুলে আনা হয়েছে এমন এক জনপদের চিত্র, যেখানে জীবন চলছে সরলরেখায়। সেখানে পায়ে পায়ে মিশে আছে অভাব-অনটন। সেই অভাবের মলিনতাকে মানুষ জয় করেছে উৎসবের উজ্জ্বলতা দিয়ে।
‘সাঁতাও’ তৈরি হয়েছে গণ-অর্থায়নে। অর্থাৎ এর প্রযোজক এক-দুজন নয়, হাজার হাজার মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আর্থিক অবদানে ছবিটি তৈরি করেছেন খন্দকার সুমন। দেশের ছবির ইতিহাসে এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা হয়ে থাকবে।
রংপুরের নদীপারের গল্পনির্ভর এই ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পরই চলছিল স্থানীয় শাপলা টকিজে। আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত সাঁতাও দেখতে দীর্ঘদিন পর হলে ভিড় করেছেন হাজারো দর্শক।
কবি সফুরা খাতুন বলেন, হলে দর্শক আসবে না এমনটা নয়। তবে দেখার মতো ছবি হতে হবে। যার প্রমাণ হলো ‘সাঁতাও’।
কবি এসএম সাথী বেগম বলেন, রংপুরের নির্মাতা, রংপুরেই চিত্রায়ন আর এখানকার আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত সাঁতাও। এর আগাগোড়া দারুণ উপভোগ্য। একই ধরণের কথা জানান শিক্ষক সাহিনা খাতুন। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে সবকিছুতে মেকি মনে হয়। নিখাঁদ ভালোবাসা, ঘর-সংসার, অভাব-অনটনসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠছে সাঁতাওয়ে।
ছবিটির নির্মাতা খন্দকার সুমন বলেন, দেশের উত্তরবঙ্গে আমার বেড়ে ওঠা। জন্মসূত্রে এখানকার মাটি ও মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয়। সে কারণে এই অঞ্চলকেন্দ্রিক গল্পের আলোকেই নির্মিত হয়েছে ‘সাঁতাও’। শেকড়ের গল্প সমৃদ্ধ এই ছবিটি আমি দেশের প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষকে দেখাতে চাই।
পৃথিবী বদলানোর সঙ্গে মানুষের রুচিরও পরিবর্তন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দর্শক চায় নিখাঁদ গল্প, ছবিতে কোনো অলঙ্কার চায় না। বর্তমান সময়ের তরুণ ও শিক্ষিত দর্শকের দেখার উপযোগী ছবি নির্মাণ করলে অবশ্যই ফের তাদের হলে ফেরানো সম্ভব হবে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার নুঝাত তাবাসসুম রিমু জানান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সার্বিক সহযোগীতায় রংপুরে ২৮ ও ২৯ এপ্রিল দু’দিনব্যাপী চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে ‘সাঁতাও’ ছবিটি প্রদর্শন করা হবে। প্রতিদিন চারবার দুপুর ২টা, বিকেল ৪টা, সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৮টায় এই ছবি প্রদর্শন করা হবে।