৯০০ কোটি ডলার দিতে পারলে মৃত্যুদণ্ড এড়াতে পারবেন ভিয়েতনামের নারী ধনকুবের

0
10
আদালতে ট্রুং মি লান,৩ ডিসেম্বর, ছবি: এএফপি

ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনায় ট্রুং মি লানের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল নিম্ন আদালতে। ভিয়েতনামে আবাসন খাতের এই ধনকুবের এবার আপিলেও হেরে গেলেন। আজ মঙ্গলবার লানের আপিল আবেদনটি খারিজ করে দেন উচ্চ আদালত। ফলে তাঁর মৃত্যুদণ্ডই বহাল থাকল।

আবাসন কোম্পানি ভান থিন ফাত হোল্ডিংস গ্রুপের চেয়ারপারসন লান। গত এপ্রিলে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও ঘুষ গ্রহণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে এ নারী ধনকুবেরের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। শুধু ভিয়েতনাম নয়, বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক জালিয়াতির মামলা হিসেবে তাঁর এই মামলাকে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তবে ৬৮ বছর বয়সী এই নারীর এখনো মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পাওয়ার সুযোগ আছে। ভিয়েতনামের আইন অনুযায়ী, ট্রুং মি লান যদি আত্মসাৎ করা অর্থের ৭৫ শতাংশ ফেরত দেন, তবে তাঁর সাজা কমে যাবজ্জীবন হতে পারে।

গত এপ্রিলে বিচারিক আদালত দেখতে পান, মি লান গোপনে সাইগোন কমার্শিয়াল ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ করেন। এটি দেশের পঞ্চম বৃহত্তম ঋণদাতা ব্যাংক। এই ব্যাংক থেকে ১০ বছর ধরে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ ও নগদ অর্থ তুলে নিয়েছেন তিনি, যার পরিমাণ ৪৪ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার।

আইনজীবীরা বলেন, এই অর্থের মধ্যে ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ট্রুং মি লান নয়–ছয় করেছেন। আর ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার যে তিনি আত্মসাৎ করেছেন, তা প্রমাণিত। আর এই গুরুতর আর্থিক অপরাধে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ভিয়েতনামে এ ধরনের শাস্তির রায় খুবই বিরল। আর সেখানে আর্থিক অপরাধে খুব কম ধনাঢ্য নারীরই মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার আদালত বলেন, ট্রুং মি লানের মৃত্যুদণ্ড কমানোর কোনো ভিত্তি নেই। অবশ্য আত্মসাৎকৃত অর্থের তিন–চতুর্থাংশ অর্থাৎ ৯০০ কোটি ডলার ফেরত দিলে এখন তিনি মৃত্যুদণ্ড এড়াতে পারবেন। তবে এখনো তাঁর সামনে একটি সুযোগ আছে। তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে সাধারণ ক্ষমা চাইতে পারেন।

বিচারকাজ চলার সময় ট্রুং মি লান কখনো কখনো উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলেন। তবে সাজার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিককালে আপিল শুনানি চলার সময় তিনি অনেক বেশি অনুতপ্ত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি বিব্রত এবং তার একমাত্র চিন্তা ছিল, যা নিয়েছেন, তা ফেরত দেওয়া।

আদালতে ট্রুং মি লান। ৩ ডিসেম্বর, ছবি: এএফপি

হো চি মিন সিটিতে সিনো–ভিয়েতনামিজ পরিবারে জন্ম ট্রুং মি লানের। শুরুর দিকে তিনি বাজারে মায়ের সঙ্গে কসমেটিকসের স্টলে বসতেন। এরপর ১৯৮৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টি অর্থনৈতিক সংস্কার চালু করলে ট্রুং মি ভূমি ও সম্পত্তি কেনাবেচা শুরু করেন। ১৯৯০–এর দশকে বিভিন্ন হোটেল ও রেঁস্তোরার একটি বড় অংশের মালিক বনে যান তিনি।

গত এপ্রিলে মি লিন যখন দণ্ডিত হন, তখন তিনি বেশ নামকরা একটি আবাসন ফার্ম ভ্যান থিন ফাত গ্রুপের চেয়ারওম্যান ছিলেন।

এই মামলায় ট্রুং মি লানের সঙ্গে থাকা বাকি ৮৫ আসামির সবাই দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর মি লানের স্বামী, ভাতিজিসহ বাকিদের ২০ বছর থেকে ৩ বছরের স্থগিত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মনে করা হয়, ব্যাংক খাতে তৈরি হওয়া ব্যাপক আতঙ্ক দূর করে সাইগন কমার্শিয়াল ব্যাংককে টিকিয়ে রাখতে শত শত কোটি ডলার দিয়েছে ভিয়েতনামের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আইনজীবীরা যুক্তি তুলে ধরে বলেছিলেন, তাঁর এই অপরাধ ‘গুরুতর ও নজিরবিহীন’। এবং তাঁকে ক্ষমার কোনো সুযোগ নেই।

ট্রুং মি লানের আইনজীবীরা বলেন, তিনি যত দ্রুত সম্ভব ৯০০ কোটি ডলার জোগানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সম্পদ বিক্রি করে নগদ অর্থ জোগাড় করা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

হো চি মিন সিটিতে লানের বিলাসবহুল কিছু সম্পত্তি রয়েছে, যা দ্রুত বিক্রি হতে পারে। আর বাকি অর্থ বিভিন্ন ব্যবসাক্ষেত্র বা সম্পত্তির প্রকল্পে শেয়ার বা স্টেক হিসেবে রয়েছে।

দেশজুড়ে এ জালিয়াতির সঙ্গে এক হাজারের বেশি সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এখন কর্তৃপক্ষ এসব সম্পদ জব্দ করবে। এরই মধ্যে ট্রুং মি লান নিজেকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে অর্থের জন্য বন্ধুদের দারস্থ হয়েছেন বলে বিবিসি মনে করছে।

বিচার চলাকালে ট্রুং মি লানের আইনজীবীরা আর্থিক দিক বিবেচনায় তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তাঁরা বলেন, মৃত্যুদণ্ড যখন মাথার ওপর ঝুলছে, তখন সেরা দামে নিজের সম্পত্তি ও বিনিয়োগ বিক্রি করতে আলোচনা করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। এর মধ্য দিয়ে ৯০০ কোটি ডলার জোগাড় করাটাও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই তাঁকে যাবজ্জীবন দিলে এই আলোচনা চালিয়ে যাওয়াটা তাঁর জন্য অনেকটা সুবিধা হতো।

ট্রুং মি লানের আপিল খারিজ হওয়ার আগে আইনজীবী নগুয়েন হুই থিপ বলেন, তাঁর অধীনে থাকা সম্পত্তির পরিমাণ ক্ষতিপূরণের অর্থের চেয়ে অনেক বেশি। তবে এগুলো বিক্রির জন্য সময় ও চেষ্টার দরকার। কারণ, অনেক সম্পদই আবাসন খাতে। আর সেগুলো বিক্রি করে নগদ অর্থ জোগাড় করা সময়সাপেক্ষ বিষয়।

ভিয়েতনামে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি রাষ্ট্রীয় গোপন বিষয় বলে গণ্য করা হয়। এখন দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কত আসামি আছেন, তার কোনো সরকারি তথ্য নেই। যদিও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভাষ্য, এ সংখ্যা এক হাজারের বেশি। বিশ্বের সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম একটি।

তবে ট্রুং মি লান ৯০০ কোটি ডলার সংগ্রহ করতে পারলে তিনি মৃত্যুদণ্ড থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

বিবিসি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.