নিবন্ধন ও কাগজ হালনাগাদে বাসের মালিকদের কাছ থেকে বছরে ৯০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ নাকচ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআইবি) যে গবেষণা প্রতিবেদনে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে, তাও প্রত্যাখ্যান করেছে পরিবহন খাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বুধবার রাজধানীর বনানীতে সদর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, টিআইবির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। তাদের প্রতিবেদন অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রতিবেদনে চাঁদাবাজির কথাও বলা হয়েছে। এটা গোঁজামিল রিপোর্ট। সবকিছু মিলে তারা ৯০০ কোটি টাকার হিসাব দিয়েছে। এই ৯০০ কোটি টাকার হিসাব তারা কোথায় পেলে? তথ্য-প্রমাণ কী? সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ তারা বিআরটিএতে আসতে পারত। তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না।
টিআইবির প্রতিবেদনের জবাব দিতেই আজ সংবাদ সম্মেলন করে বিআরটিএ। সংস্থাটি শতভাগ ঘুষমুক্ত এ নিশ্চয়তা দিতে পারেননি নুর মোহাম্মদ মজুমদার। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখানে ১০০ পার্সেন্টের বিষয় না। তারাই (টিআইবি) বলেছে ৪৬ শতাংশ বাস মালিককে ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ লেনদেন হয় না, এটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট কেউ হলফ করে বলতে পারবে না। যদি হয়ে থাকে, সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো আছে। পৃথিবীর সব দেশে যারা অনিয়ম-দুর্নীতি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আছে।’
টিআইবির প্রতিবেদনে যেসব গঠনমূলক সুপারিশ রয়েছে সেগুলো গ্রহণ করবেন জানিয়ে নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, বিষয়টা কিন্তু এমন নয়, বিআরটিএতে কিছুই হচ্ছে না। অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে। গ্রাহকদের বরাবরই বলা হয়, দালালের কাছে না যেতে। সব প্রক্রিয়ায় অনলাইন করেছি, যেন গ্রাহকরা ঘরে বসে সেবা পান। এখন বিআরটিএতে দালাল নেই বললেই চলে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাস নিবন্ধনে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগার কথা। লাগে গড়ে ৩০ দিন। ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ বাসের নিবন্ধন পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে। বাস প্রতি গড়ে ১২ হাজার ২৭২ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। ফিটনেস নবায়নে গড়ে ৭ হাজার ৬৩৫ এবং রুট পারমিট নবায়নে ৫ হাজার ৯৯৯ টাকা ঘুষ দিতে হয় বাস প্রতি। এভাবে বছরে ৯০০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন হয় বিআরটিএতে।
সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, এ ধরনের অনুমান নির্ভর তথ্য সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টালের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স, রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের আবেদন ঘরে বসে দাখিল ও ঘরে বসেই সার্টিফিকেট প্রিন্ট করা যায়। ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার দিনই পাওয়া যায়। ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে স্মার্ট কার্ড ডাকযোগে গ্রাহকের ঠিকানায় পাঠানো হয়। তাই সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির অভিযোগ যুক্তিযুক্ত নয়। ফিটনেস নবায়নে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নির্ধারিত দিনে গাড়ি যাচাই এবং সনদ দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, মোটরযান ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টারের (ভিআইসি) মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিটনেস যাচাই হয় ঢাকায়। এতে ১৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা লাগে। তাই ঘুষ নেওয়ার সুযোগ নেই। রুট পারমিট কমিটির সুপারিশে বিআরটিএ দেয়। কমিটির সভা অনুষ্ঠানের বিলম্বের কারণে এতে সময়ক্ষেপণ হতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই ৪৫ দিন লাগে না।