৯টি কলাম মেরামত করে ব্যবহার করা যাবে ভবনটি

0
126
সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাফে কুইন ভবন

রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাফে কুইন ভবনটি ব্যবহার করা যাবে বলে মত দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তদন্ত কমিটি। তবে এর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ৯টি কলাম ভালোভাবে মেরামত করতে হবে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভবনটির বিস্তারিত কারিগরি পর্যালোচনা করে এই মেরামত কাজ করতে হবে । গত ৭ মার্চ ১৮০/১ সিদ্দিকবাজারের সাততলা ক্যাফে কুইন ভবনে আকস্মিক বিস্ফোরণে ২৩ জনের প্রাণহানি হয়। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির ব্যবহার উপযোগিতার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ছয় সদস্যবিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠন করে রাজউক। কমিটি গতকাল সোমবার রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে উল্লিখিত মতামত দেওয়া হয়। তবে দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে কোনো কিছু বলা হয়নি।

কমিটির সদস্য সচিব রাজউকের অঞ্চল ৫/৩-এর কর্মকর্তা রঙ্গন মণ্ডল জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাঁরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এর বাইরে তিনি কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান। কমিটির আরেক সদস্য বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, কমিটির সদস্যরা পুঙ্খানপুঙ্খভাবে ভবনটির ক্ষতির অবস্থা পর্যালোচনা করেছেন। এমনকি রিপোর্ট প্রণয়নের আগেরদিন রোববার সন্ধ্যায়ও তাঁরা ভবনটি শেষবারের মতো পরিদর্শন করেন। দেখা যায়, ভবনের ২৪টি কলামের মধ্যে ৯টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে চার-পাঁচটি কলাম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এগুলো মেরামত করে ভবনটি ব্যবহার করা যাবে। এর চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অনেক ভবন বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা ভালোভাবে মেরামত করেছেন, যেগুলো এখন ব্যবহার করা হচ্ছে। গার্মেন্ট খাতেও এ রকম শতাধিক ভবন মেরামত করে ব্যবহার চলছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণের ফলে ভবনের নিচতলা, বেজমেন্টের স্লাব ও বিমসহ রিটেইনিং ওয়ালেরও ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে ভবনটি ব্যবহার বন্ধ আছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনসংলগ্ন স্থাপনা, রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীদের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে ক্ষতিগ্রস্ত বিম-কলাম অতিদ্রুত মেরামত করা দরকার। এসব কাজ মালিকপক্ষের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠানের চুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। মেরামতের কাজ শেষ করতে হবে ১৮০ দিনের মধ্যে। এ ছাড়া ভবনের সামনের ফুটপাতসহ ২৬ ফুট পর্যন্ত জায়গা কংক্রিটের রোড ব্যারিয়ার বা স্টিল রোড ব্যারিয়ার দিয়ে রাখতে হবে কর্ডন করে। ভবনের সামনের রাস্তায় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বাসসহ অন্যান্য হালকা যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া যেতে পারে। তবে রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত রাস্তায় সব যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হবে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক রাজউকের বোর্ড সদস্য মেজর (অব.) ইঞ্জিনিয়ার শামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী বলেন, ‌ইতোমধ্যে ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, তাদের কাছে কিছু হালকা ব্যারিয়ার আছে। এ ছাড়া মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাদের কংক্রিটের কিছু ব্যারিয়ার অব্যবহৃত অবস্থায় আছে। সেগুলোও দিতে রাজি হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ব্যারিয়ারগুলো ব্যবহার করে রাস্তা যান চলাচলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। ট্রাফিক বিভাগের জনবলকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, হালকা বাসসহ সাধারণ যেসব যানবাহন চলে সেগুলো চলতে দেওয়া যায়। কারণ মানুষের অনেক দুর্ভোগ হচ্ছে।

আহত দু’জন এখনও ঝুঁকিতে: শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ৭ জনের মধ্যে দু’জন এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায়। তাঁরা হলেন– মো. হাসান ও জাহান সরদার সেলিম। তাঁরা দু’জনই আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে। তবে আইসিইউতে থাকা আরেক আহত বাচ্চু মিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাঁকে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনিসহ চিকিৎসাধীন অপর ৪ জন

ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন। বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন আইয়ুব হোসেন বলেন, হাসান ও সেলিমকে সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.