৬৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগের চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে যা আছে, যা নেই

0
182

আগের গণবিজ্ঞপ্তিগুলোয় একজন প্রার্থী যত খুশি তত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারতেন। কেউ কেউ ৫০০ থেকে ১ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আবেদন করতেন। এতে প্রার্থীদের আবেদন করতেই অনেক বেশি টাকা চলে যেত। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির নতুন শর্ত অনুসারে, ৪০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ আবেদন করতে পারবেন না।

৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে কোনো প্রার্থী যদি তাঁর পছন্দবহির্ভূত যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে ইচ্ছুক হন, তবে তাঁকে ই-অ্যাপ্লিকেশন ফরমে ‘হ্যাঁ’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। যদি ইচ্ছুক না হন, তবে ‘না’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। যাঁরা ‘হ্যাঁ’ অপশনে ক্লিক করবেন, তাঁদের মেধাক্রম অনুসারে শূন্য পদ থাকা সাপেক্ষে দেশের যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুপারিশ করা হবে।

এর আগে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনের জন্য ১০০ টাকা করে ফি নেওয়া হতো। অর্থাৎ কেউ ৫০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করলে তাঁর ফি আসত ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এবার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনের ফি এক হাজার টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনের জন্য প্রার্থীকে একবারে এক হাজার টাকা দিতে হবে।

তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ২০১৮ সালের আগে যাঁরা নিবন্ধন সনদ পেয়েছিলেন, তাঁদের জন্য বয়সসীমা শিথিল করা হয়েছিল। অর্থাৎ নিবন্ধন করা থাকলে ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী প্রার্থীরাও আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে সবার জন্য বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩৫ বছর করা হয়েছে। তাই আগের নিবন্ধন থাকলেও বয়সের কারণে সব নিবন্ধনধারী আবেদন করতে পারবেন না। নতুন যাঁরা নিবন্ধন পেয়েছেন, তাঁরাই শুধু আবেদন করতে পারবেন।

পারভেজ ইসলাম নামের এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, আবেদন ফি এবং বয়স নির্দিষ্ট করে দেওয়ায় নতুন প্রার্থীরা উপকৃত হবেন। কারণ, আগে দেখা যেত পছন্দমতো স্কুল-কলেজ পেতে অনেকে ১ থেকে ১ হাজার ২০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করতেন। ফলে আবেদন করতেই কারও কারও ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতো। বয়স নির্দিষ্ট করে দেওয়ায় নতুন প্রার্থীরা সুবিধা পাবেন। নিবন্ধনের পর স্কুল পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হবে না।

চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো ইনডেক্সধারী প্রার্থীদের আবেদনের সুযোগ না পাওয়া। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের পরিপত্রের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা শিক্ষক নিয়োগসংক্রান্ত পরিপত্রের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদের কার্যকারিতা সাময়িকভাবে স্থগিত করায় কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের (ইনডেক্সধারী) চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার সুযোগ নেই। তবে স্কুলপর্যায়ে যদি কোনো নিবন্ধন সনদধারীপ্রাপ্ত (এমপিওভুক্ত) প্রার্থীর কলেজ পর্যায়ের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ থাকে এবং কলেজ পর্যায়ে এমপিওভুক্ত না হন, তবে তাঁর শিক্ষক নিবন্ধন সনদে উল্লিখিত কলেজ পর্যায়ের পদে ও প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবেন। বিপরীতক্রমে কলেজ পর্যায়ে নিবন্ধন সনদধারী এমপিওভুক্ত প্রার্থীর যদি স্কুল পর্যায়ের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ থাকে এবং তিনি যদি স্কুল পর্যায়ে এমপিওভুক্ত না হন, তবে তাঁর নিবন্ধন সনদে উল্লিখিত স্কুল পর্যায়ের পদে ও প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবেন।

এনটিআরসিএর ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ইনডেক্সধারী প্রার্থীরা চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগের দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। তাঁদের দাবি, ১৬তম নিবন্ধন সনদ দিয়ে অন্তত একবার যেকোনো শর্তে (ইনক্রিমেন্ট, অভিজ্ঞতা ও পূর্বের ইনডেক্স নম্বর বাতিল করে ফ্রেশার হিসেবে) তাঁদের আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হোক।

দেওয়ান আবদুর রহিম হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক মো. সান্ত আলী বলেন, ‘আবেদনে চাকরির বিধান রাখার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এটি বেকারদের জন্য আশীর্বাদ। তবে ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের আবেদনের সুযোগ না থাকায় তাঁরা বদলি বা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে পারবেন না। শিক্ষকেরা পরিবার ছেড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে চাকরি করছেন। এমপিও নীতিমালা অনুসারে দ্রুত বদলি নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়ন করা হোক। নিয়োগে সুপারিশ-পরবর্তী যোগদান ও এমপিও করার ক্ষেত্রে প্রার্থীরা হয়রানির স্বীকার হন। প্রার্থীদের হয়রানি বন্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এবং এনটিআরসিএর কঠোর নির্দেশনা জরুরি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.