৬১ কোটি টাকার বিনিয়োগ পেল টেন মিনিট স্কুল

0
193
দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান টেন মিনিট স্কুলের তিন সহপ্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবইয়াদ রাইদ, আয়মান সাদিক ও মির্জা সালমান হোসেন বেগ, ছবি: সংগৃহীত

নতুন করে ৬১ কোটি টাকা বিনিয়োগ পেয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান টেন মিনিট স্কুল (10 ms.com)। এই বিনিয়োগের নেতৃত্ব দিয়েছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম কনজাংশন ক্যাপিটাল, পিক ফিফটিনের সার্জ (পূর্বে সিকয়িয়া ক্যাপিটাল ইন্ডিয়া) এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে প্রি-সিরিজে ফান্ডিং রাউন্ড নিশ্চিত করল এই স্টার্টআপ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে টেন মিনিট স্কুল কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার প্রতিষ্ঠানটি জানায়, টেন মিনিট স্কুলে এবারের বিনিয়োগে দেশের নামকরা কয়েকজন অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর, ভারতীয় ইউনিকর্ন ক্রেডের প্রতিষ্ঠাতা কুনাল শাহ, মাইএশিয়াভিসির ব্যবস্থাপনা অংশীদার সাজিদ রহমান এবং বেশ কয়েকজন স্থানীয় অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশি কোনো স্টার্টআপের জন্য সিড-স্টেজে এটি সর্বোচ্চ বিনিয়োগ। এতে করে টেন মিনিট স্কুলে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াল ৭৮ কোটি টাকায়।

২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ষষ্ঠ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অনলাইন ব্যাচে লাইভ ক্লাস ও পরীক্ষার মাধ্যমে বোর্ড সিলেবাসভিত্তিক পড়াশোনা ও পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করছে নিয়মিত। প্রতিবছর অনলাইন ব্যাচে প্রস্তুতি নিয়ে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাচ্ছে। ভর্তি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদেরও প্রস্তুতিতে সাহায্য করছে টেন মিনিট স্কুল। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন নিয়েও নিয়মিত কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। স্পোকেন ইংলিশ, আইএলটিএস, সফটওয়্যার, সফট স্কিলস, ফ্রিল্যান্সিংসহ অনেক ধরনের দক্ষতা উন্নয়নভিত্তিক কোর্স আছে টেন মিনিট স্কুলের।

টেন মিনিট স্কুলের অ্যাপে বাংলাদেশের বোর্ড সিলেবাসের ওপর ৩৫ হাজারের বেশি রেকর্ডেড ভিডিও লেকচার আছে। এর পাশাপাশি ৮২ হাজারের বেশি কুইজ আছে। এ ছাড়া মডেল টেস্ট, ই-বুক ও লেকচার শিটের মতো শিক্ষামূলক রিসোর্স টেন মিনিট স্কুল নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই শিক্ষামূলক অ্যাপটি ব্যবহার করছে ৫৭ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। এ ছাড়া টেন মিনিট স্কুলের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন কনটেন্ট থেকে প্রতি মাসে এক কোটির বেশি শিক্ষার্থী অনলাইনে পড়াশোনা করছে।

নতুন বিনিয়োগের বিষয়ে টেন মিনিট স্কুলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আয়মান সাদিক বলেন, ‘টেন মিনিট স্কুলে আমরা সব সময় শিক্ষাকে সবার জন্য সহজলভ্য করতে কাজ করছি। এই বিনিয়োগ আমাদের লক্ষ্যকে সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও দক্ষতা উন্নয়ন খাতে আমাদের কার্যক্রমকে উৎসাহ দিচ্ছে। এই পর্বের বিনিয়োগের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে পড়াশোনা ও দক্ষতাবিষয়ক সহায়তা দিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমরা এখন আমাদের ভিশনকে নতুন উচ্চতায় নিতে প্রস্তুত।’

টেন মিনিট স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত বছর থেকে বিশ্বজুড়ে স্টার্টআপগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিশ্বব্যাপী স্টার্টআপে মাত্র ৫০ কোটি ডলার বিলিয়ন বিনিয়োগ এসেছে, যা ২০২২ সালের একই সময়ে এসেছিল ১৮০ কোটি ডলার। এমন পরিস্থিতিতেও টেন মিনিট স্কুল তাদের বিভিন্ন পণ্য ও সেবার গুণগত মান উন্নয়নে কাজ করে নিজেদের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে। এতে করে টেন মিনিট স্কুলের সঙ্গে দেশের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। টেন মিনিট স্কুল অ্যাপটি ডাউনলোড করা হয়েছে ৫৭ লাখের বেশি। অ্যাপটি থেকে বিনা মূল্যে শিক্ষাসেবা নিচ্ছে ৩ কোটি ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। আর অর্থের বিনিময়ে সেবা নেওয়ার সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখের বেশি।

টেন মিনিট স্কুলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মির্জা সালমান হোসেন বেগ বলেন, ‘বিশ্বের চলমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে বিনিয়োগ পাওয়া বেশ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। এটা আমাদের একাগ্রতার একটা পরীক্ষাও ছিল। সারা দেশে মানসম্মত শিক্ষাকে অনলাইনে সহজলভ্য করতে আমাদের এই যাত্রাকে সমর্থন করে আমাদের সঙ্গী হওয়ার জন্য বিনিয়োগকারীদের কৃতজ্ঞতা জানাই।’

টেন মিনিট স্কুলে বিনিয়োগের বিষয়ে স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে টেন মিনিট স্কুলের যাত্রাপথে সহায়তা করতে পেরে আমরা উচ্ছ্বসিত।’

অন্যদিকে কনজাংশন ক্যাপিটালের ম্যানেজিং পার্টনার কিরিল কোজেভনিকভ বলেন, ‘টেন মিনিট স্কুলের এই গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ পর্বের অংশ হতে পেরে আমরা ভীষণভাবে আনন্দিত। এটা বাংলাদেশের বাজারে আমাদের প্রথম ভেঞ্চার। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এই অংশীদারত্ব বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে সহায়তা করবে।’

টেন মিনিট স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই টেন মিনিট স্কুল গুণগত পড়াশোনাকে সারা দেশের সব শিক্ষার্থীর কাছে সহজলভ্য করে তোলার পাশাপাশি প্রথাগত ও ডিজিটাল শিক্ষাপদ্ধতির মধ্যকার দূরত্ব নিরসনে কাজ করছে। টেন মিনিট স্কুলের ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী শহরের বাইরের। তার মধ্যে ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী মেয়ে। এই বিনিয়োগ একটি শিক্ষিত ও দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরিতে টেন মিনিট স্কুলকে সহায়তা করবে বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.