বছরে কত বাড়ল নিত্যপণ্যের দাম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও মার্কিন ডলারের বিনিময় হারে বড় উল্লম্ফনের কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে বাজারে।

0
120

রাজধানীর রামপুরার ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা মুনজিলা খাতুন তাঁর দুই ছেলের যৌথ সংসারে থাকেন। দুই ছেলেরই কম বেতনের চাকরি বলে সংসারের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সে জন্য মুনজিলা খাতুন পথের পাশে চুড়ি নিয়ে বসেছেন। চুড়ি বিক্রি করে প্রতিদিন যে আয় হয়, তা থেকে নিজের হাতখরচের টাকা রেখে বাকিটা সংসারে দেন।

মুনজিলা খাতুন বলেন, ‘ছেলেরা আমাকে কাজ করতে দিতে চায় না। কিন্তু আমি তাদের সংসারের পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখছি। আটজনের সংসারে দুজনের আয়ে এখন আর চলে না। তাদের আয়ও বাড়ছে না। এ জন্য নিজে থেকে কিছু একটা করছি। এতে তাদের কিছুটা সাহায্য হয়।’

বাজারে দফায় দফায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় মুনজিলা খাতুনের মতো নিম্ন আয়ের মানুষেরাই শুধু নন, মধ্যবিত্তরাও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে শোনা যায়। নানাভাবে ব্যয় কাটছাঁট করেও সাধারণ মানুষ পেরে উঠছেন না। সরকারি হিসাবই বলছে, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো চড়া।

মানুষ কষ্টে আছে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। বাজারের লাগাম টানতে তাই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাহলে জনগণ সুফল পাবে।

গোলাম রহমান, সভাপতি, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব অনুযাযী, দেশে গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। খাদ্য মূল্যস্ফীতির লাগাম কিছুতেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। তিন মাস ধরেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপর রয়েছে। অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বেড়ে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ হয়েছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেই দেখা যায়, গত এক বছরে বাজারে বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম বেশ বেড়েছে। দু–একটার দাম একই রকম আছে। আর হাতে গোনা কয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে।

টিসিবির প্রতিবেদন পর্যালোচনার পাশাপাশি গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার ও রামপুরা বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েকটি পণ্য সরকারি তথ্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

সরকারি হিসাবে গত এক বছরে (৩১ অক্টোবর ’২২ থেকে ৩১ অক্টোবর ’২৩) নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের। এটির দাম ১৩২ শতাংশ বেড়েছে। এখন প্রতি কেজি ১৩০–১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১১৯ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও মুদ্রার বিনিময় হার এবং সুদহার বাজারভিত্তিক করার মতো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারণে বাজারে বড় কোনো প্রভাব পড়েনি।

গোলাম রহমান, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি

রামপুরা বাজারের মহিউদ্দিন জেনারেল স্টোরের মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, চাল ও ডালের দাম বাড়তির দিকে। পেঁয়াজ ও আলুর দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু যেভাবে বেড়েছিল, সেভাবে কমছে না।

টিসিবির হিসাবে মূল্যবৃদ্ধিতে পেঁয়াজের পরই রয়েছে আলু। বাজারে এখন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। গত এক বছরে চিনির দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ। রুই মাছের দাম ৩৩ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসের দাম যথাক্রমে ১১ ও ১২ শতাংশ বেড়েছে।

মোটা চালের দাম গত এক বছরে ৪ শতাংশের মতো কমেছে। বাজারে এখন আবার মোটা চালের দাম কিছুটা বাড়তি দেখা যাচ্ছে। মোটা দানার ডালের দামের ক্ষেত্রে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। গত এক বছরে বাজারে মোটা দানার ডালের দাম ৬ শতাংশের মতো বেড়েছে।

সরকারি হিসাবে সবচেয়ে বেশি কমেছে খোলা আটার দাম। গত এক বছরে খোলার আটার কেজিপ্রতি দাম ২৩ শতাংশের মতো কমেছে। সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ৬ শতাংশ।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও মুদ্রার বিনিময় হার এবং সুদহার বাজারভিত্তিক করার মতো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারণে বাজারে বড় কোনো প্রভাব পড়েনি।

গোলাম রহমান আরও বলেন, মানুষ কষ্টে আছে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। বাজারের লাগাম টানতে তাই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাহলে জনগণ সুফল পাবে। অন্যথায় এভাবেই চলতে থাকবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.