সিটি করপোরেশনের নথিপত্রে দেখা যায়, ২০১৭ সালে ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের মার্চে পঞ্চম তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়। বাকি কাজ শেষ হয় ২০২১ সালের অক্টোবরে।
ওই সময়ই ঠিকাদার ভবনটি উত্তর সিটিকে বুঝিয়ে দেয়। এরপর এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। যে লক্ষ্যে ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি।
উত্তর সিটির অঞ্চল-২–এর নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মচারী বলেন, ফ্ল্যাটগুলো তৈরি হয়ে পড়ে আছে। সামান্য লিফট কেনায় গাফিলতির কারণে তাঁরা সেখানে থাকতে পারছেন না। বেশি ভাড়া দিয়ে অন্য জায়গায় থাকতে হচ্ছে। আবার সিটি করপোরেশনও ভাড়া আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ফ্ল্যাট প্রস্তুত
ভবনটিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য ৩২টি করে মোট ৬৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের ফ্ল্যাটের আয়তন প্রায় ৮৫০ বর্গফুট করে। প্রতিটি ফ্ল্যাটে তিনটি শয়নকক্ষ, দুটি শৌচাগার, একটি রান্নাঘর এবং বসা ও খাওয়ার কক্ষের জায়গা রয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ফ্ল্যাটের আয়তন ৭০০ বর্গফুট। সেখানে শয়নকক্ষ দুটি। বাকি সুবিধা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের ফ্ল্যাটের মতো।
ভবনটি ঘুরে গত ৩০ নভেম্বর দেখা যায়, ফ্ল্যাটগুলোতে দরজা-জানালা লাগানো হয়েছে। রং করা হয়েছে। সব কাজই শেষ হয়েছে। কিন্তু ভবনটিতে লিফট না থাকায় সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। লিফট ছাড়াই ওই ভবনে উত্তর সিটির আঞ্চলিক কার্যালয় (অঞ্চল-২) চালু হয় গত অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে।
লিফট বসাতে দেরি কেন
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লিফট বসাতে দেরির কারণে বিলম্বে উদ্যোগ এবং ঠিকাদার যথা সময়ে কাজ শেষ না করা। সিটি করপোরেশন ভবনটি বুঝে নেয় ২০২১ সালের অক্টোবরে। আর লিফট কেনার জন্য ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় গত ফেব্রুয়ারিতে, অর্থাৎ ভবন বুঝে নেওয়ারও চার মাস পর। ঠিকাদারের লিফট সরবরাহের কথা ছিল গত ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। কিন্তু ঠিকাদারও এখনো লিফট সরবরাহ কিংবা স্থাপন করতে পারেনি।
লিফট কেনার কার্যাদেশ পেয়েছে রওশন এলিভেটর নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) শেখ সালাউদ্দিন বলেন, ‘কার্যাদেশে বেঁধে দেওয়া সময় একটি লিফট আমদানির জন্য যথেষ্ট নয়। আমরা ছয় মাস সময় পেয়েছি। কিন্তু প্রয়োজন ৯ থেকে ১০ মাস।’ তিনি বলেন, লিফট চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। স্থাপনে আরও মাস দেড় সময় লাগতে পারে।
সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভবনের পূর্ত কাজ শেষ হওয়ার আগেই লিফট কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত ছিল, যাতে ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার স্থাপন করা যায়। কিন্তু সেটা হয়নি। ঠিকাদারও দেরি করছে।
লিফট কেনার দায়িত্ব উত্তর সিটির প্রকৌশল বিভাগের বিদ্যুৎ সার্কেলের। এই সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, কর্তৃপক্ষ যখন নির্দেশ দিয়েছে, তখনই লিফট কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
ক্ষতি কোটি টাকার বেশি
নতুন ভবনের ফ্ল্যাটগুলো যাঁদের বরাদ্দ দেওয়া হবে, তাঁদের বেতন থেকে বাড়িভাড়া ভাতা কেটে রাখবে উত্তর সিটি। উত্তর সিটির কর্মচারীরা জানান, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে বাড়িভাড়া ১৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। মানে হলো, গড়ে প্রতি মাসে একটি ফ্ল্যাট থেকে ১৪ হাজার টাকা ভাড়া বাবদ আয় হতো সিটি করপোরেশনের।
হিসাব করে দেখা যায়, এক বছর ৬৪টি ফ্ল্যাট খালি থাকায় উত্তর সিটির ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
শুধু সিটি করপোরেশনের এই ভবন নয়, ঢাকায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থার নির্মাণ করা কিছু ভবন খালি পড়ে আছে। যেমন সরকারের উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের আবাসনের সুবিধার্থে রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের কাঠের কারখানা এলাকায় পাঁচটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ভবনের অধিকাংশ ফ্ল্যাট দুই বছর ধরে খালি। কর্মকর্তারা সেখানে যেতে আগ্রহী নন।