’৯১-এর ঘূর্ণিঝড়ে মা-বাবা, ভাই-বোনকে হারান, এবার কাউকে হারাতে চান না জোহরা

0
78
স্বামী-সন্তান নিয়ে আগেভাগে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার নাজিরারটেক এলাকার বাসিন্দা জোহরা খাতুন

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল, দেশের ইতিহাসে অন্যতম প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। জোহরা খাতুনের বয়স তখন ছিল মাত্র ১০ বছর। থাকতেন কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার খুদিয়ারটেক এলাকায়। ওই দুর্যোগে প্রাণে বেঁচে যান জোহরা। কিন্তু মা-বাবা, ভাই-বোনকে হারান তিনি।

শৈশবের সেই শোক বুকে নিয়ে বড় হন জোহরা। বিয়ে করে স্বামী-সন্তান নিয়ে থিতু হয়েছেন। কিন্তু ছোটবেলার ওই ভয়ংকর স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেননি তিনি। ওই সময়ের কথা মনে হলে এখনো আতঙ্কে ছেয়ে যায় জোহরার মন। ৩২ বছর পর এসেও সেই কথা বলতে কেঁপে কেঁপে ওঠেন এই নারী।

জোহরা এখন বসবাস করেন কক্সবাজার পৌরসভার নাজিরারটেক এলাকায়। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে নতুন আতঙ্ক ভর করেছে তাঁর মনে। তাই সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে এবার স্বামী-সন্তান নিয়ে আগেভাগে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি।

জোহরার সঙ্গে কথা হলো আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে, নাজিরারটেকে তাঁর ঘরের সামনে। পাশে তাঁর পরিবারের একজন ঘরের চাল মজবুত করছিলেন, যাতে ঝড়ে উড়ে যেতে না পারে।

মোখা ঝরাবে প্রবল বৃষ্টি, ৫ জেলায় ভূমিধসের আশঙ্কা

জোহরা বলেন, ‘১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার বেলায় ঘরের মানুষের অবহেলা ছিল। তখন কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার চেষ্টা করেনি। একসময় ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে তুমুল বাতাস। কোনোরকম গাছে উঠে যাই।’ স্মৃতি হাতড়ে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন জোহরা। কান্না সামলে বললেন, ‘ওই ঝড়ে সবাই মারা গেল। একা বেঁচে ছিলাম।’

এবার আর আগের মতো ভুল করতে চান না জোহরা। বললেন, ‘ঝড়ের কথা শুনলে ভয় লাগে। ছোটবেলায় ঘূর্ণিঝড়ে সবাইকে হারিয়েছি। এখন আর কাউকে হারাতে চাই না।’

কক্সবাজারে সাগর উত্তাল, ঘাটে ফিরেছে ৪,৩০০ ট্রলার

তাই পরিবারের সদস্য আর মূল্যবান ও জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে কক্সবাজার সদরের কোনো একটা আশ্রয়কেন্দ্র ঠাঁই নেবেন তিনি। যদিও ফেলে যাওয়া জিনিসপত্র ফিরে এসে পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে জোহরার।

ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনলে জোহরার মতো শাহিদা বেগমের মনে ভয় ভর করে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ভয়ংকর স্মৃতি রয়েছে তাঁরও। ওই সময় তিনি ছিলেন কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে তাঁদের পাড়ায় ২০-২২ জনের প্রাণ গিয়েছিল। দুঃসহ সেই পরিস্থিতি যাতে আবারও মোকাবিলা করতে না হয়, সে জন্য এবার আগেভাগে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.