চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস জুলাই-এপ্রিলে দেশে ১ হাজার ৭৭২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে। এ আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এসেছিল ১ হাজার ৭৩০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয়।
দেশে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে বরাবরই মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত শ্রমিকেরা এগিয়ে ছিলেন। তবে চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় পাঠানোর তালিকায় উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। দেশটিতে কর্মরত ও বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা এই অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৩০৪ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে সৌদি আরব থেকে, যা পরিমাণে ৩০৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৪০ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে।
প্রবাসী আয়সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে সৌদি আরব থেকে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৪৪ কোটি ডলার এবং ইউএই থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২০৭ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে।
সৌদি আরবকে টপকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় আসার কারণ কী? এ বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রবাসী আয় সংগ্রহ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার সময় যাঁরা কাজ হারিয়েছিলেন, তাঁদের বিশেষ ভাতা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার। আর দেশটিতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অর্থ পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া আমেরিকা থেকে হুন্ডিও হয় কম। ফলে দেশটি থেকে যে আয় আসে, তার প্রায় পুরোটাই পাঠানো হয় বৈধ চ্যানেলে।
অপর দিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গত কয়েক বছরে নতুন করে জনশক্তি রপ্তানি হলেও হুন্ডি প্রথাও বেশ জনপ্রিয়। সেখানে অনেকেই আবার দীর্ঘদিন ধরে বেকার জীবন যাপন করছেন। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়া প্রবাসীদের অধিকাংশই শ্রমিক। তাঁদের আয়ও বেশ কম। এসব কারণে প্রবাসী আয় আসা শীর্ষ দেশের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে সৌদি আরব। একই কারণে ইউএইসহ ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোও পিছিয়ে পড়ছে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমেরিকায় যাঁরা থাকেন, তাঁদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। তাঁদের আয় পাঠানোর কথা নয়। মূলত অবৈধ ও বৈধ অনেক অর্থ দেশটিতে পাচার হয়ে গেছে। অনেকে সেই অর্থ বৈধ করতে দেশে এখন ফিরিয়ে আনছেন। এখন ডলারের দাম বেড়েছে, পাশাপাশি ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আনলে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা পাওয়া যায়। ফলে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে। পাশাপাশি দেশটিতে থাকা প্রবাসীদের আয়ও বেশ ভালো। অর্থ পাঠানো প্রক্রিয়াও বেশ সহজ।
এই ব্যাংকার আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে হুন্ডি এখনো হাতের নাগালেই রয়েছে। ফলে জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও দেশগুলো থেকে বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা বাড়ছে না।