৩ বছরেই বেহাল ১৬০ কোটি টাকার সড়ক

0
141
খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কটি কদিন আগেই সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং উঠে গেছে, ছোট ছোট গর্ত তৈরি হয়েছে। গতকাল খুলনার বটিয়াঘাটার নিজখামারে

সড়কটির কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিম্নমানের বিটুমিন ও নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় সড়কটির এই হাল হয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের।

সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বিটুমিন উঠে গেছে, কোথাও তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। কিছু কিছু জায়গায় পিচ সরে গিয়ে দলা পাকিয়ে তৈরি হয়েছে উঁচু ঢিবি। দেবে গেছে অনেক জায়গা। কিছু কিছু জায়গা হয়ে গেছে ঢেউখেলানো। এমন চিত্র খুলনা-সাতক্ষীরা ‘আঞ্চলিক’ মহাসড়কের। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার তিন বছরের মধ্যেই এমন বেহাল অবস্থা হয়েছে সড়কটির। সড়কের খুলনার অংশের নির্মাণকাজে ব্যয় হয়েছিল ১৬০ কোটি টাকা।

অল্প সময়ে সড়কটির এমন বেহাল অবস্থা হওয়ায় কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন, নিম্নমানের বিটুমিন ও নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় কিছুদিন যেতে না যেতেই সড়কটির এমন নাজুক অবস্থা হয়েছে।

তবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের দাবি, সড়কটি সংস্কারের পর আগের চেয়ে যানবাহন চলাচলের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে খালাস হওয়া পাথরসহ প্রায় সব পণ্যই এই সড়কের ওপর দিয়ে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে সড়কটি সংস্কারের কয়েক বছরের মধ্যেই এমন হাল হয়েছে।

খুলনা-সাতক্ষীরার এই সড়কটি এত দিন আঞ্চলিক মহাসড়ক ছিল। গত ৫ জানুয়ারি সড়কটি জাতীয় মহাসড়ক হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে যখন নির্মাণকাজ হয়, তখন সেটি ছিল আঞ্চলিক মহাসড়ক।

মহাসড়কটির দৈর্ঘ্য ৬৪ কিলোমিটার। ওই পথের জিরো পয়েন্ট থেকে ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারোমাইল পর্যন্ত পড়েছে খুলনার মধ্যে। ওই পথটুকু ৩৩ কিলোমিটার। ওই সড়কের প্রশস্তকরণ ও পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। শুধু খুলনা অংশের প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৬০ কোটি টাকা। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর দেশের ৫০টি জেলার যে ১০০টি সড়ক ও মহাসড়ক প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছিলেন, তার মধ্যে এই সড়কটিও ছিল।

খুলনা সওজ থেকে জানা গেছে, আগে সড়কটির প্রশস্ততা ছিল ১৮ ফুট। সংস্কার করে সেটিকে ৩৬ ফুট করা হয়। বালু, পাথরসহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে সড়কের গড় পুরুত্ব করা হয় তিন ফুটের মতো। প্রকল্পের আওতায় প্রশস্তকরণ ও পুনর্নির্মাণের পাশাপাশি আটটি কালভার্ট, বাজার এলাকায় ড্রেন ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বাস থামার মতো স্থান তৈরি করা হয়।

৪ জুলাই জিরো পয়েন্ট থেকে আঠারোমাইল পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় পিচ উঠে গেছে, তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। ভারী যানবাহন চলতে চলতে কোথাও কোথাও সড়কের দুই পাশের পিচ দেবে গেছে। এতে সড়কের ওপর ঢেউয়ের মতো তৈরি হয়েছে। কয়েক মাস আগে সড়কের কিছু স্থানে নতুন করে সংস্কার করার চিহ্ন স্পষ্ট বোঝা যায়। বিশেষ করে জিরো পয়েন্ট এলাকা, কৈয়া বাজার, ডুমুরিয়া বাজার, চুকনগর বাজারের আগে ও পরে সড়কের অবস্থা বেশি নাজুক।

চুকনগর বাজার এলাকায় কথা হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক তহিদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যে সড়কটির অবস্থা যে এতটাই নাজুক হয়ে যাবে, তা কেউ ভাবতেও পারেনি। কিছু কিছু এলাকায় সড়কটির এমন অবস্থা হয়েছে যে গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। দূর থেকে সড়কের এমন খারাপ অবস্থা বোঝা যায় না। এ কারণে সমস্যাটা বেশি হয়। বিশেষ করে রাস্তা দেবে গিয়ে ঢেউয়ের মতো হওয়ায় গাড়ির নিয়ন্ত্রণ ঠিক রাখা যায় না।

জানতে চাইলে খুলনা সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান বলেন, খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কটি ছিল আঞ্চলিক মহাসড়ক। এর সর্বোচ্চ ওজন নেওয়ার সক্ষমতা সাড়ে ২২ মেট্রিক টন। কিন্তু ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য খালাস করে ঢাকায় নেওয়া হয়, ওই সব ট্রাকের ওজন থাকে ৫০ মেট্রিক টনের বেশি। সড়কটি দ্রুত নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ সেটি। এ ছাড়া পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ যানবাহন চলাচল বেড়েছে, তাতেও সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, সড়কটি জাতীয় মহাসড়ক হিসেবে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসা হচ্ছিল। সম্প্রতি সেটি অনুমোদন করেছে মন্ত্রণালয়। এখন সড়কটিকে জাতীয় সড়কের অবকাঠামো অনুযায়ী উন্নীত করা হবে।

বিভিন্ন এলাকার মানুষের অভিযোগ, ওই সড়কের কাজের মান ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। কাজ শেষ হওয়ার এক বছরের মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় পিচ উঠে যাওয়া শুরু হয়। এবার ঈদের আগে দুই দিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় সড়কটি আরও বেশি খারাপ হয়ে গেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.