ফুলেফেঁপে উঠেছে চিপের বাজার, লাখ কোটি ডলারের ঘরে এনভিডিয়া

0
104
এনভিডিয়া, ছবি: রয়টার্স

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিপ কোম্পানি এনভিডিয়ার বাজারমূল্য গতকাল মঙ্গলবার এক লাখ কোটি ডলারে উঠেছে। এনভিডিয়ার তৈরি চিপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির প্রাণভোমরা, সে কারণে এআইয়ের বাড়বাড়ন্তের যুগে এনভিডিয়ার বাজারমূল্যও ফুলেফেঁপে উঠছে বলে দ্য গার্ডিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে।

২৪ মে এনভিডিয়া বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের রাজস্ব আয়ের পূর্বাভাস প্রকাশ করেছে। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি রাজস্ব আয় হবে বলে এই পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ারদর সেদিনই ২৫ শতাংশ বাড়ে। ফলে তাদের বাজারমূল্য ৯৪ হাজার কোটি ডলারে উঠেছে।

গতকাল এনভিডিয়ার শেয়ারদর আরও ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। তাতে কোম্পানিটির বাজারমূল্য এক লাখ কোটি ডলারের ঘরে উঠে যায়, চিপ কোম্পানিগুলোর মধ্যে এই প্রথম। এক লাখ কোটি ডলারের বাজারমূল্যসম্পন্ন অন্যান্য কোম্পানিগুলো হলো মেটা, অ্যামাজন ও গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেট। ব্লুমবার্গের সূত্র দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইতিহাসে ৯ম কোম্পানি হিসেবে এনভিডিয়ার বাজারমূল্য এক লাখ কোটি ডলারে উঠল।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এক আলোচনায় এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াং রাজস্ব আয়ের পূর্বাভাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এআইয়ের জগতে এখন ‘আইফোন সময়’ চলছে, গত নভেম্বরে ওপেন আইয়ের চ্যাটজিপিটি উন্মুক্ত হওয়ার পর এই প্রযুক্তিতে মানুষের আগ্রহ আকাশ ছুঁয়েছে।

জেনসেন হুয়াং বলেন, ‘বিশ্বের ডেটা সেন্টারগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর ধুম পড়েছে। আমার মনে হয়, ডেটা সেন্টারগুলো ঢেলে সাজানোর ১০ বছর মেয়াদি উত্তরণকাল শুরু হয়েছে। এরা সবাই এখন দ্রুতগতির কম্পিউটিংয়ের দিকে ঝুঁকছে’।

ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীরাও এখন ওপেনএআইয়ের মতো স্টার্টআপগুলোয় বিনিয়োগ করছে, কারণ, সব কোম্পানি নতুন প্রযুক্তির দৌড়ে শামিল হতে চায় বা তার প্রয়োগ করতে চায়। কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা বাড়াতে চিপ প্রয়োজন হয়, যা দিয়ে নতুন অ্যাপ তৈরি হয়। এক হিসাবে জানা যায়, চ্যাটজিপিটি তৈরি করতে ১০ হাজার এনভিডিয়া চিপ প্রয়োজন হয়েছে।

এদিকে এনভিডিয়ার সাফল্যের প্রভাব অন্যান্য চিপ কোম্পানির ওপরও পড়েছে। এনভিডিয়ার ডিজাইন করা চিপ বানায় তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, যাদের যন্ত্রাংশ বানায় নেদারল্যান্ডসের কোম্পানি এএসএমএল—এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বেড়েছে।

চিপ যখন মহামূল্যবান

এত দিন পৃথিবীতে যুদ্ধবিগ্রহ হয়েছে তেল নিয়ে। কিন্তু এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে লড়াই জমে উঠেছে আরেক অমূল্য সম্পদের জন্য। সেটি হলো, সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ, যা প্রতিদিনের জীবনে ব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত হয়। গাড়ি থেকে শুরু করে মুঠোফোন, কম্পিউটার—সবখানেই এই চিপের ব্যবহার।

বিবিসির এক সংবাদে বলা হয়েছে, চিপ আকারে ছোট, সিলিকনের ছোট এক টুকরা কিন্তু চিপের বাজার মোটেও ক্ষুদ্র নয়। সারা পৃথিবীতে ৫০ হাজার কোটি ডলারের বাজার এই সেমিকন্ডাক্টর, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তা ফুলেফেঁপে দ্বিগুণ হবে।

এই চিপ তৈরির কাঁচামাল আসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে, অনেক কোম্পানি এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এই সরবরাহব্যবস্থা এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে এর ফলে যার হাতে এই সরবরাহব্যবস্থা বা ‘সাপ্লাই চেইনের’ নিয়ন্ত্রণ থাকবে, তাদের হাতেই থাকবে পরাশক্তি হয়ে ওঠার চাবিকাঠি।

এই প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ বেশির ভাগই আছে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। তবে চীন এখন নিম্ন প্রযুক্তি ছেড়ে উচ্চ প্রযুক্তিতে যেতে চাইছে। চিপ তৈরিতে বিনিয়োগও করছে তারা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চাইছে চীন যেন কিছুতেই এ ক্ষেত্রে খুব বেশি এগোতে না পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.