৩৩ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে মাথা জোড়া লাগানো যমজ শিশু রাবেয়া-রোকাইয়াকে সফলভাবে পৃথক করা হয়েছে। রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই অস্ত্রোপচার শেষ হয়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ধরনের অস্ত্রোপচার সারা বিশ্বেই বিরল ঘটনা। উপমহাদেশে এ রকম অস্ত্রোপচার এটিই প্রথম।
ঢাকার সিএমএইচ কর্তৃপক্ষ জানায়, এ ধরনের অপারেশন অত্যন্ত জটিল এবং সাফল্যের হার খুব বেশি নয়। অস্ত্রোপচার শেষে ৩ বছর ১৫ দিন বয়সী এই শিশুরা এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু এ ধরনের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অপারেশন–পরবর্তী ঝুঁকি এবং জটিলতা অত্যন্ত বেশি।
অস্ত্রোপচারের সবচেয়ে জটিল অংশটি ‘যমজ মস্তিষ্ক’ আলাদা করা হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। এই অস্ত্রোপচারে হাঙ্গেরি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সিএমএইচের নিউরো অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, নিউরো ও প্লাস্টিক সার্জনরাসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট, হার্ট ফাউন্ডেশন, নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউট, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালের শতাধিক সার্জন ও অ্যানেসথেসিওলজিস্ট অপারেশনে অংশ নেন।
সিএমএইচে সফল অস্ত্রোপচার
উপমহাদেশে এ রকম অস্ত্রোপচার এটিই প্রথম
পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের এই কন্যাশিশুদের ২০১৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এখানে দুই স্তরে মস্তিষ্কের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারিতে শিশু দুটিকে হাঙ্গেরি পাঠানো হয়। সেখানে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৮টি অস্ত্রোপচার করা হয়।
২০১৭ সাল থেকে এ শিশু দুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চিকিৎসকেরা জানান, প্রতি পাঁচ-ছয় মিলিয়নে এক শিশু এ ধরনের বিরল জটিল মস্তিষ্কের সমস্যা নিয়ে জন্মায়। হাঙ্গেরি সরকারের মাধ্যমে হাঙ্গেরিয়ান দাতব্য সংস্থা অ্যাকশন ফর ডিফেন্সলেন্স পিপল ফাউন্ডেশন (এডিপিএফ) চিকিৎসায় সক্রিয় সহায়তা করেছে। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা হাঙ্গেরিসহ বিশ্বজুড়ে তারা গরিব মানুষকে সেবা দিয়ে থাকে।
শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন বিষয়টির সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দু-এক দিন পরে সংবাদ সম্মেলন করে অস্ত্রোপচার সম্পর্কে বিশদভাবে জানানো হবে।
ঢাকা সিএমএইচ কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, এই অপারেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থার সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেল।