৩২ শতাংশ পোশাক কারখানা এখনো ঈদ বোনাস দেয়নি

0
184
পোশাক খাতের একটি কারখানা

আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ সাত শিল্পাঞ্চলের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের ২ হাজার ৩৩১ কারখানার মধ্যে ৩২ দশমিক ২৬ শতাংশ বা ৭৫২টি আজ বুধবার পর্যন্ত শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেয়নি। এমনকি ১০১ পোশাক কারখানা এখনো শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতনও দেয়নি।

শিল্প পুলিশ আজ বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায় এ তথ্য দিয়েছে। তৈরি পোশাকের পাশাপাশি আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা ও কুমিল্লার অন্য শিল্পকারখানাও পর্যবেক্ষণ করে শিল্প পুলিশ। তাদের তথ্যানুযায়ী, সাত শিল্পাঞ্চলে সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৬১৬ শিল্পকারখানা রয়েছে। তার মধ্যে ৩৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৫০টি এখন পর্যন্ত ঈদ বোনাস পরিশোধ করেনি। আর ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ বা ৪৯৭টি কারখানা শ্রমিকদের গত মার্চ মাসের বেতন দেয়নি।

শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, আজ বুধবার ১ হাজার ২৮৫টি শিল্পকারখানা ঈদের ছুটি দিয়েছে। তাতে এখন পর্যন্ত ছুটি দেওয়া কারখানার সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৫৬৬টিতে দাঁড়িয়েছে। তবে ঈদের ছুটিতেও ৭৯ কারখানায় উৎপাদন চলবে বলে তথ্য দিয়েছে শিল্প পুলিশ।

শিল্প পুলিশের তদারকির মধ্যে থাকা ৯ হাজার ৬১৬ শিল্পকারখানার মধ্যে ২ হাজার ৩৩১টি পোশাক কারখানা। আর বস্ত্র কারখানার সংখ্যা ৩৫৮।

উল্লেখিত সাত শিল্পাঞ্চলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য ১ হাজার ৬৩১ কারখানার মধ্যে ৭২টি আজ বুধবার পর্যন্ত গত মাসের বেতন দেয়নি। আর ৬০৫ কারখানা এখনো শ্রমিকদের ঈদ বোনাস পরিশোধ করেনি। অন্যদিকে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্য ৭০০ কারখানার মধ্যে ১৪৭টি এখনো ঈদ বোনাস পরিশোধ করেনি। আর শ্রমিকের বেতন দেয়নি ২৯ কারখানা।

এ ছাড়া বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সদস্য ৩৫৮ কারখানার মধ্যে ১২টি এখনো মার্চ মাসের বেতন দেয়নি। আর ঈদ বোনাস পরিশোধ করেনি ১১৮ কারখানা।

অবশ্য শিল্প পুলিশের হিসাবের সঙ্গে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করেন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম। তিনি আজ বিকেলে বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিজিএমইএর সদস্য সচল কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ১৫১। তার মধ্যে মাত্র ২৫টি কারখানা আজ পর্যন্ত মার্চ মাসের বেতন দেয়নি। আর ৯০ শতাংশ বা ১ হাজার ৯৩৬টি কারখানা ইতিমধ্যে ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৭৬৮ কারখানা চলতি মাসের আংশিক বেতন দেবে।

শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, দুটি কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা হওয়ার শঙ্কা ছিল। সেগুলো ইতিমধ্যে সমাধান করা হয়েছে। কাল বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সব কারখানা বেতন-ভাতা পরিশোধ করবে। তিনি আরও বলেন, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪৩০টি কারখানা ঈদের ছুটি দিয়েছে। বুধবার ৭৫৩টি কারখানা ছুটি হবে। আর আগামীকাল বৃহস্পতিবার ৯৬৮টি কারখানা ছুটি দেবে।

অন্যদিকে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে আপাতত কোনো সমস্যা নেই। গাজীপুরের একটি কারখানা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তবে সেই কারখানা মালিকপক্ষ আমাদের জানিয়েছে কাল তারা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেবে। আশা করছি, কাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে সব কারখানাই বেতন-ভাতা পরিশোধ করে ছুটি দেবে।’

সার্বিক বিষয় নিয়ে শ্রমিকনেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, কিছু কারখানার শ্রমিকেরা চলতি মাসের ১৫ দিনের বেতন দাবি করছে। এটি নিয়ে কিছু সমস্যা থাকলেও গত মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ নিয়ে বড় কোনো জটিলতা নেই।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (আরএমজি টিসিসি) ১৪তম সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ঈদের ছুটির আগেই পোশাকশিল্পের মালিকপক্ষকে শ্রমিকের বোনাস পরিশোধ করতে হবে। গত মাসের বকেয়া বেতনও দিতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.