কোটি টাকা পুরস্কারের আয়োজন ‘বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট (বিগ)’ জিতে নিলো মার্কোপোলো এআই ও ফেব্রিক লাগবে লিমিটেড। যৌথভাবে তৃতীয় বিগ বিজয়ী ঘোষণা করা হয় প্রতিষ্ঠান দুটিকে। পুরস্কার হিসেবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান পাবে এক কোটি টাকা করে। ডিজিটাল বিপণনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর সেবাদাতা মার্কোপোলো এআইয়ের দুই প্রতিষ্ঠাতা হলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্নাতক রোবায়েত ফারহান এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে স্নাতক তাসফিয়া তাসবিন। এই দুই তরুণ বিশ্বখ্যাত সামিয়কী ‘ফোর্বস’-এর ‘থার্টি আন্ডার থার্টি ২০২৩ এশিয়া’ তালিকায় স্থান পেয়েছেন। অপর বিজয়ী উদ্ভাবনী উদ্যোগ ফেব্রিক লাগবে লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা হলেন নাজমুল ইসলাম ও সহপ্রতিষ্ঠাতা রাজিয়া সুলতানা।
নাজমুল ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে মেকাট্রনিক্স প্রকৌশলে স্নাতক এবং রাজিয়া সুলতানা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব (গ্র্যান্ড ফিনাল) অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সেরা ৫০টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আর চ্যাম্পিয়ন দুই উদ্ভাবনী উদ্যোগ পেয়েছে দুই কোটি টাকা পুরস্কার।
বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা কোথায় ছিলাম, কোথায় আছি এবং কীভাবে এসেছি, সেটা সবাইকে জানাতে হবে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার পেছনে আমাদের সরকারের অনেক বড় ভূমিকা আছে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের ঘোষণা দেন, তখন বিষয়টি অনেকেই বিশ্বাস করেননি। তাঁর দক্ষ নেতৃত্বে সময়ের আগেই সরকার দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে। সরকারের এখন লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সরকার নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য কাজ করছে।’
বাংলাদেশের স্টার্টআপ (নতুন উদ্ভাবনী উদ্যোগ) একদিন বিশ্ব জয় করবে বলে বিশ্বাস করেন সালমান এফ রহমান।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ দেশের সমস্যাগুলোর প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান দিয়ে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তরুণ উদ্ভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণদের মেধার ঘাটতি নেই, তাদের প্রয়োজন সহযোগিতা। বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্টের মাধ্যমে আমরা সেই সুযোগ করে দিচ্ছি। ভারত, সিঙ্গাপুর থেকে এরই মধ্যে বাংলাদেশের স্টার্টআপগুলোর জন্য ৮০ কোটি ডলারের ওপর বিনিয়োগ এসেছে। স্টার্টআপ ধীরে ধীরে ওঠে না, রকেটের গতিতে এগোয়।’ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্টার্টআপ এরই মধ্যে বিলিয়ন ডলারের খাতে পরিণত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। বিগ থেকে স্টার্টআপদের নেটওয়ার্কিং ও ফিডব্যাক পাওয়ার সুযোগ থাকে, যা তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইসিটি সচিব মো. সামসুল আরেফিন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক রনজিৎ কুমার, আইসিটি বিভাগের আইডিয়া প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আফতাফ হোসেন প্রমুখ।
পুরস্কার পাওয়ার পর মার্কোপোলো ডটএআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা তাসফিয়া তাসবিন বলেন, ‘এ পুরস্কার আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আমরা সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চাই। তাই আমরা আগামী দিনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছি।’
ফেব্রিক লাগবে লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গ্রামের তাঁতি ও পোশাক উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র পেশাজীবীদের নিয়ে কাজ করছি। তাঁদের পণ্য আমাদের মাধ্যমে তাঁরা সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে পারছেন। আমরা পণ্যের দাম আগে থেকে নির্ধারণ করে দিই না। ক্রেতা তাঁদের পছন্দমতো দামে কেনার সুযোগ পান।’
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীন উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প (আইডিয়া) বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট প্রতিযোগিতার আয়োজক। ২০১৯ সালে শুরু হয়ে এবারে তৃতীয়বারের মতো বিগ পুরস্কার দেওয়া হলো।
তারিকুর রহমান খান