২৮ হাজার শিক্ষার্থীর ‘দুঃখ’ শাটল ট্রেন

0
160
শাটল ট্রেন

যাতায়াত নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম শাটল ট্রেন। সড়কপথে যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকলেও তা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। ট্রেন প্রধান ভরসা হলেও এতে আসন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে দাঁড়িয়ে থেকে যেতে হয় সোয়া এক ঘণ্টার পথ। বাধ্য হয়ে অনেকে চড়েন ট্রেনের ছাদে। ঝুঁকি নিয়ে চলায় একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা।

দীর্ঘদিন ধরে এ সংকট থাকলেও চবি কিংবা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে তেমন মনোযোগী নয়। তারা একে অপরের ওপর দায় চাপায়। শাটল ট্রেনে আসন না পাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলতে গিয়ে রবিউল আলম নামে এক শিক্ষার্থীর দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এর পর আন্দোলন হলেও বাড়েনি বগি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করার সময় গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় ১৭ জন আহত হন। এ ঘটনায় তিনজন এখনও আছেন হাসপাতালের আইসিইউতে। এটি ছিল শাটল ট্রেনে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। এ ছাড়া ছিনতাই, চুরি, পাথর নিক্ষেপ, শ্লীলতাহানির মতো ঘটনাও ঘটছে।

২৮ হাজার শিক্ষার্থীর পাশাপাশি চবি ক্যাম্পাসে বসবাস করা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্বজনের একটি বড় অংশ আসা-যাওয়া করে শাটল ট্রেনে। সব মিলিয়ে প্রতিদিনের যাত্রী ১২ হাজারের মতো। তাদের জন্য ভরসা কেবল ৭০০ আসনের দুটি ট্রেন। ক্যাম্পাস ও শহরের মধ্যে দুটি ট্রেন দিনে সাতবার আসা-যাওয়া করে। যাত্রীর তুলনায় এ সার্ভিস অপ্রতুল হওয়ায় পোহাতে হয় মহাদুর্ভোগ। ক্লাস চলাকালে দুর্ভোগ অনেক বেড়ে যায়।

ট্রেনের বগি বাড়ানো ও সব শিক্ষার্থীর জন্য সিট নিশ্চিত করার দাবিতে গত রোববারও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে অংশগ্রহণ করেন বৃহস্পতিবার আহত কয়েকজন। আহত শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বিপ্লব বলেন, ‘বাধ্য হয়ে আমরা শাটল ট্রেনের ছাদে উঠি। ভেতরে জায়গা না থাকার কারণেই ছাদে ভ্রমণ করতে হয়। যাতায়াতের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকলে এ দুর্ঘটনা ঘটত না।’

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলোন, ‘আমরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কয়েক দফা জানিয়েছি। প্রয়োজনে আবার জানাব। তবে দীর্ঘসূত্রতা কেন হচ্ছে, তা জানা নেই।’

বারবার আশ্বাস দিলেও হয়নি সমাধান

পরিবহন খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বাড়লেও হচ্ছে না শাটল ট্রেনের উন্নতি। দেওয়া হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের জন্য বাসও। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে রবিউল আলম শাটল ট্রেন দুর্ঘটনায় দুই পা  হারানোর পর শিক্ষার্থীরা ট্রেনে ১২ বগি দেওয়ার দাবি নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন করেন। আন্দোলনের পর ৭-৮ বগির বদলে ৯ থেকে ১০টি বগি নিয়ে চলে ট্রেন। শিক্ষার্থীরা ট্রেনের বগি ও সূচি বাড়ানোর দাবিতে মাঝেমধ্যেই আন্দোলন করলেও বিশ্ববিদ্যালয় রুটে চলছে এক জোড়া জীর্ণ ট্রেন।

করোনা ছড়িয়ে পড়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় রুটে চলাচল করত ডেমু ট্রেন। করোনা-পরবর্তী সময়ে নতুন আরেকটি ডেমু ট্রেন চালু হওয়ার কথা থাকলেও উল্টো বন্ধ হয়ে একমাত্র ডেমু ট্রেনটি। এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দৈনিক ৯ বারের পরিবর্তে সাতবার ট্রেন চলাচল করে। ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। সেদিন তিনি ঘোষণা দেন, এক বছরের মধ্যে চবিতে ১৫-১৬টি কোচযুক্ত একটি অত্যাধুনিক ট্রেন দেওয়া হবে। তবে এখনও পাওয়া যায়নি সেই ট্রেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন আয় বাড়ছে

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরিবহন খাতে টাকা নিচ্ছে। এ খাতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭০ লাখ ৭২ হাজার , ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৫ লাখ টাকা আদায় করে কর্তৃপক্ষ। বাজেট অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদায় করা হবে ৮০ লাখ টাকা। বছর বছর আদায় বাড়লেও বাড়ছে না পরিবহন সুবিধা।

নিরাপত্তার অভাব

গত বছর ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় শাটল ট্রেনে এক ছাত্রীকে দুই বহিরাগত ধর্ষণের চেষ্টা করে। এর দুই মাস পর একদিন সকালে এক ব্যক্তি এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। পরে তাকে থানায় সোপর্দ করা হয়। এ ছাড়া গত এক বছরে চলন্ত ট্রেনে ১২ বারের বেশি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে ২০ জনের মতো শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গত তিন মাসে প্রায় ১৫ শিক্ষার্থীর ব্যাগসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র চুরি হয়েছে ট্রেন থেকে। কেউ কেউ হারিয়েছেন বড় অঙ্কের টাকা।

মারজান আক্তার, চবি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.