‘খুবই হতাশাজনক’।
কলম্বো টেস্টে আজ শ্রীলঙ্কার কাছে বাংলাদেশের ইনিংস ও ৭৮ রানে হারের পর এটা মোটামুটি প্রায় সবারই মুখে কথা হতে পারে। নাজমুল হোসেনও অন্য কিছু বলেননি। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে দাঁড়িয়ে এ কথাই বলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। পরে সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন নাজমুল। কিন্তু সেটি অন্য প্রসঙ্গ।
আসল প্রসঙ্গ হতে পারে, ইনিংস হার এবং আজ সকালের সেশনে মোট ২৫ মিনিটের খেলা। ৩৮.৪ ওভারে ৬ উইকেটে ১১৫ রানে তৃতীয় দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। আজ সকালে সেশন শুরুর প্রায় আধা ঘণ্টার মধ্যে ৩৪ বলের ব্যবধানে মাত্র ১৮ রান যোগ করে বাকি সব উইকেট হারিয়ে ১৩৩ রানে অলআউট হয় নাজমুলের দল।
কাল মোটামুটি সবাই টের পেয়ে গিয়েছিলেন, সকালের সেশনেই হয়তো ইনিংস ব্যবধানে হারতে হতে পারে। মনের কোণে এক চিলতে দুঃসাহসও কি ছিল? লিটন দাস আছেন ক্রিজে, নাঈম আছেন এবং ব্যাটিংটা এই স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার একদম খারাপও করেন না। কে জানে হয়তো স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে যতটা সম্ভব পাল্টা লড়াইও দেখা যেতে পারে! বাংলাদেশ দল নিয়ে এমন আশায় বুক বাঁধার সমর্থক দিন দিন কমছে ঠিকই, তবে একদমই যে কেউ ছিলেন না তা ভেবে নেওয়াটা সম্ভবত ভুল। প্রশ্ন হচ্ছে, কেউ যদি থেকেও থাকেন আজ সকালের সেশনের খেলা দেখার পর তিনি কি আর কখনো এই পরিস্থিতিতে আশায় বুক বাঁধবেন? উত্তর আমরা সবাই জানি।

কারণও মোটামুটি সবার জানা। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার এই ২৫ বছরে এমন পরিস্থিতিতে বহুবার পাল্টা লড়াইয়ে না গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং। কলম্বোতেও তাই ঘটল এবং তাতে বাংলাদেশ টপকে পেছনে ফেলল অস্ট্রেলিয়াকে।
অবশ্যই ইতিবাচক কোনো রেকর্ডের পাতায় এটি ঘটেনি। ইনিংস হারের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ এখন অস্ট্রেলিয়ার ওপরে।
টেস্টে ২৫ বছরের পথচলায় বাংলাদেশ এই সংস্করণে ১৫৪ ম্যাচে ২৩ জয়ের পাশাপাশি ১৯ ড্র ও ১১২ ম্যাচ হেরেছে। এর মধ্যে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে ৪৭ ম্যাচ। টেস্টে ১৪৮ বছরের পথচলায় অস্ট্রেলিয়া ৮৭৫ ম্যাচে ৪২০ জয়ের পাশাপাশি ২১৯ ড্র ও ২৩৪ ম্যাচে হেরেছে। এর মধ্যে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে ৪৬ ম্যাচ।
এই টেস্টে আরেকটু ভালো ক্রিকেট খেলতে পারতাম। হার–জিত তো অবশ্যই থাকবে, কিন্তু আমরা যদি আরেকটু ডমিনেট করে খেলতে পারতাম, তাহলে হয়তো উন্নতির জায়গাটা আমরা দেখতে পেতাম।
কলম্বো টেস্টে হারের পর নাজমুল হোসেন
এই পরিসংখ্যান মোটেও অস্ট্রেলিয়ার শক্তির সঙ্গে তুলনা করে দেওয়া নয়। ধারে–ভারে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনাই চলে না। ১৪৮ বছরে মাত্র ৪৬ বার ইনিংস ব্যবধানে হার যেমন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেই যায়, আর বাংলাদেশের টেস্ট খেলার ধরন জানা থাকলে ২৫ বছরে ৪৭ বার ইনিংস ব্যবধানে হারও এই দলের সঙ্গে মানানসই। রসিকতার জায়গাটা হলো, অস্ট্রেলিয়ার যা করতে ১৪৮ বছর লেগেছে, বাংলাদেশের সেটা পেছনে ফেলতে লাগল মাত্র ২৫ বছর!
সে যা–ই হোক, শুধু অস্ট্রেলিয়া নয় ভারতকেও পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। নিজেদের ৯৩ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ৫৯০ ম্যাচে ১৮১ জয়ের পাশাপাশি ২২৩ ড্র ও ১৮৫ ম্যাচ হেরেছে ভারত। এর মধ্যে ইনিংস ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়ার সমান ৪৬ ম্যাচ হেরেছে ভারত। ইনিংস ব্যবধানে হারে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে শুধু ইংল্যান্ড (৬৬), নিউজিল্যান্ড (৫০) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৪৮)।
ইনিংস হারে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে শ্রীলঙ্কা (৪২), দক্ষিণ আফ্রিকা (৩৯), পাকিস্তান (৩৪) ও জিম্বাবুয়ে (৩০)।

বাংলাদেশের সর্বশেষ ইনিংস হার কলম্বোয়, যেটা শেষ হলো আজ চতুর্থ দিনে। এই হারের পর সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল বলেছেন, ‘এই টেস্টে আরেকটু ভালো ক্রিকেট খেলতে পারতাম। হার–জিত তো অবশ্যই থাকবে, কিন্তু আমরা যদি আরেকটু ডমিনেট করে খেলতে পারতাম, তাহলে হয়তো উন্নতির জায়গাটা আমরা দেখতে পেতাম। অবশ্যই এই জায়গাগুলো থেকে তো শেখার বিষয়গুলো থাকেই। এই ভুল থেকে শিখছি দেখেই হয়তো বাইরে এসে আরেকটু ভালো ফল হচ্ছে।’