পানিতে নিমজ্জিত চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা, ভোগান্তি

0
135
বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রায় সব নিচু এলাকা।

ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় কয়েক দিন ধরে ভাসছিল বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। মঙ্গলবার বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হওয়ায় পানি গিয়ে জলাবদ্ধতাও কমে এসেছে। তবে এবার এই জলাবদ্ধতা নগরী ছাড়িয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। তুমুল বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ি ঢল যুক্ত হয়ে এসব জেলা-উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা এখন পানিতে ভাসছে। মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই।

পানিতে ডুবে গিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। শুধু এই সড়কের চন্দনাইশ উপজেলা অংশে কম-বেশি তিন কিলোমিটারে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পানি ঢুকে সড়কে বিকল হয়ে পড়ে অনেক যানবাহন। সড়ক ডুবে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানও। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার আরও অনেক সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় সেসব সড়কেও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে বন্যার পানিতে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়াসহ প্রায় সব উপজেলায় কম-বেশি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এসব উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। শত শত বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় মানুষজন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকটও। সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায়। ফলে এই দুটি উপজেলায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পাশাপাশি সব উপজেলায়ও কম-বেশি বন্যা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা। সাতকানিয়ার সব ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। তাই সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার বন্যাদুর্গত মানুষকে সহায়তা করার জন্য চট্টগ্রামের জিওসি ও নৌবাহিনীর সঙ্গে কথা বলি। এর পরপরই দুই উপজেলায় সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা বন্যার্তদের সহায়তায় কাজ শুরু করে।’ বন্যার্তদের সহায়তার জন্য ৪০০ টন চাল, শুকনো খাবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

কক্সবাজার ও বান্দরবান সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ

স্থানীয়ভাবে খবর নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের চন্দনাইশ উপজেলার হাসিমপুর কসাইপাড়া এলাকা, সাতকানিয়া উপজেলার কেরানিহাট এলাকা, হাসমত আলী শিকদারের দোকান ও লোহাগাড়া উপজেলার বারআউলিয়া ডিগ্রি কলেজ এলাকায় সড়ক হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে গেছে। সড়কের ওপর দিয়ে প্রবল গতিতে বইছে পানি। এভাবে পানি উঠে যাওয়ায় সড়কে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বড় আকারের গাড়িগুলো ধীরগতিতে চলাচলের চেষ্টা করলেও ছোট যান চলাচল করতে পারছে না। এছাড়াও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম থেকে সাতকানিয়ার কেরানীহাট হয়ে বান্দরবানে বাস চলাচল করে। কিন্তু কেরানীহাটের পরে, বান্দরবান সড়কের বাজালিয়া এলাকায় পানি উঠে যাওয়ায় এই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

মঙ্গলবার দুপুরের দিকে দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মোহাম্মন ইরফান বলেন, আজ (মঙ্গলবার) ভোর থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেই সঙ্গে পাহাড়ি ঢল নামছে। যে কারণে হঠাৎ করেই সাতকানিয়া, চন্দনাইশসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পানি উঠে গিয়ে যানবাহন চলাচল

ব্যাহত হচ্ছে। সড়কের চন্দনাইশ কসাইপাড়া এলাকায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ওই এলাকায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার গাছবাড়িয়া এলাকা থেকে বাগিচারহাট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কে যানজট তৈরি হয়।

চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও বাস স্টেশন, নতুন চান্দগাঁও থানা মোড় ও শাহ আমানত নতুন সেতু থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবানে চলাচলকারি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। কিন্তু গতকাল সকাল থেকে নগরীর এসব বাসস্ট্যান্ড থেকে ওই দুই জেলার উদ্দেশ্যে গাড়ি ছেড়ে যায়নি। তবে অনেকে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

ব্যক্তিগত বিশেষ প্রয়োজনে ঢাকা গিয়েছিলেন কক্সবাজারের বাসিন্দা আহমেদ জামাল। ঢাকা থেকে ফেরার পথে চট্টগ্রামে হাতে থাকা কিছু কাজ শেষে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল তার। সকালে তিনি চট্টগ্রামে পৌঁছেন। কিন্তু

কক্সবাজারমুখি বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন তিনি। নগরীর নতুন চান্দগাঁও থানা মোড় এলাকায় আলাপকালে তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু চট্টগ্রামে এসে দেখি বাস চলাচল করছে না। পানি না কমা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া অন্যকোনো উপায় নেই।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.