২০২৪ নিয়ে কী ভাবছেন বিল গেটস

0
152
বিল গেটস, রয়টার্স

মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস কাজ থেকে অবসর নিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। কিন্তু এখনো তিনি বিশ্বের নানা প্রান্তের বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনসংক্রান্ত গবেষণার বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন। নতুন উদ্ভাবন বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা ও ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির গতিপ্রকৃতি কেমন হবে, তা-ও নিজের ব্লগসাইট ‘গেটস নোটস’-এ প্রকাশ করেন বিল গেটস। ২০২৩ সাল শেষ হতে চলল। আর কয়েক দিন পরই শুরু হবে নতুন বছর। এই সময়ে চলতি বছরের অর্জন আর আগামী বছরের গতিপ্রকৃত নিয়ে লিখেছেন তিনি। পাঠকদের জন্য লেখাটি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেছেন জাহিদ হোসাইন খান

ভবিষ্যতে আপনি কেন ২০২৩ সালের কথা মনে করবেন? আমি এ বছর বেশি মনে করব, দাদা হয়েছি বলে। এ বছর আমি প্রিয়জনদের সঙ্গে অনেক মূল্যবান সময় কাটিয়েছি। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো আমি কাজের জন্য ও অন্যান্য কারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করেছি। এ বছর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতে কেমন কাজ করবে, তার একটি আভাস পেয়েছি আমরা। ২০২৩ সাল যত শেষের দিকে আসছে, ততই আমি আজকের তরুণেরা যে বিশ্বে বাস করবে, তা নিয়ে আমি চিন্তা করছি। গত বছরের চিঠিতে আমি লিখেছিলাম দাদা হব বলে আমি কতটা উত্তেজিত ছিলাম। যে পৃথিবীতে আমার নাতনি জন্মগ্রহণ করবে, তা নিয়ে আমার ভাবনা ছিল। এখন আমি সে যে পৃথিবীতে বাস করবে, তা নিয়ে বেশি ভাবছি। এখন থেকে আর কয়েক দশক পরে তার প্রজন্মই সবকিছুর দায়িত্বে থাকবে।

এআই আরও যাবে দূরে

২০২৩ সালে আমরা যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেছি, তা ভবিষ্যতে আরও দূরে যাবে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ আর ইথিওপিয়ায় যুদ্ধের কারণে লাখ লাখ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি সুদানের জনগণের অব্যাহত দুর্ভোগের জন্য আমার মন খারাপ হচ্ছে। একই সময়ে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের জন্য অনেক মানুষ কষ্ট সহ্য করতে বাধ্য হচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কারণে সব পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৷ এই চ্যালেঞ্জিং সময় নিয়ে আমার কোনো দ্বিধা নেই, কিন্তু তারপরও আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রচণ্ড আশাবাদী। উদ্ভাবনের কাজ কখনোই দ্রুত হয় না। আমরা কঠিন সমস্যার বিরুদ্ধে বড় বড় কাজ করছি। আলঝেইমার, স্থূলতা ও সিকল সেল রোগের বিরুদ্ধে গবেষণা লাখ লাখ মানুষের জীবনকে উন্নত করবে। আমার বন্ধু প্রয়াত হ্যান্স রোজলিং বলতেন, ‘কোনো বিষয় খারাপ হতে পারে, আবার তা ভালোও হতে পারে।’ যেকোনো ক্ষেত্রে অগ্রগতি একবারে হয় না, বরং প্রতিদিন একটু একটু করে ঘটে। এ কারণেই আমি নানান বিপর্যয়ের মুখেও দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নানা কাজ করছি। আমার সহকর্মীরা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য, শিক্ষা, লিঙ্গসমতা এবং আরও অনেক কিছুর উন্নতির জন্য নিবেদিত আছে। তাদের সম্পর্কে আমি হাজার পৃষ্ঠা লিখতে পারি। এই চিঠিতে আমি শুধু কয়েকটি উত্তেজনাপূর্ণ সাফল্যের কথা লিখছি।

আশা জলবায়ু নিয়ে

আমি বিশ্বের জলবায়ু অগ্রগতি সম্পর্কে বেশ আশাবাদী। আমরা জলবায়ু ও শক্তি নিয়ে কাজ করছি ব্রেকথ্রু এনার্জি নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। গেটস ফাউন্ডেশন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মানুষকে উষ্ণ পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করছে। আমি আলঝেইমার রোগের মতো অন্যান্য ক্ষেত্রেও ব্যক্তিগতভাবে গবেষণার জন্য তহবিল দিচ্ছি। আমি এখনো মাইক্রোসফটকে পরামর্শ দিতে পারি। সামনে কী আসছে আর তা কীভাবে বিশ্বকে আরও ন্যায়সংগত জায়গা করে তুলতে ব্যবহার করা যেতে পারে, সে সম্পর্কে আমি জানতে পারি।

আমার কাজ সর্বদা একটি মূল আদর্শের ওপর কেন্দ্রীভূত, উদ্ভাবনই অগ্রগতির চাবিকাঠি। এ কারণেই আমি মাইক্রোসফট শুরু করেছিলাম। এ কারণেই মেলিন্ডা ও আমি গেটস ফাউন্ডেশন শুরু করেছি দুই দশকেরও বেশি আগে। উদ্ভাবনের কারণেই গত শতাব্দীতে আমাদের জীবনে অনেক উন্নতি হয়েছে। বিদ্যুৎ ও গাড়ি থেকে শুরু করে ওষুধ ও উড়োজাহাজের মতো উদ্ভাবন বিশ্বকে উন্নত করেছে। আজ প্রযুক্তি বিপ্লবের কারণে আমরা অনেক বেশি উৎপাদনশীল। সবচেয়ে সফল অর্থনীতির দেশগুলো উদ্ভাবনী শিল্পনির্ভর, আর তাই পরিবর্তিত বিশ্বের চাহিদা মেটাতে কাজ করছে তারা।

এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে

আমার প্রিয় উদ্ভাবনের গল্পের শুরু হয় আমার প্রিয় একটি পরিসংখ্যান দিয়ে। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বে পাঁচ বছর বয়সের আগে শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেকে কমে এসেছে।  আমরা তা করতে পেরেছিলাম আসলে উদ্ভাবনের কারণেই। বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন তৈরির নতুন উপায় নিয়ে কাজ করছেন, যা দ্রুত ও সস্তা আর খুবই নিরাপদ। বিজ্ঞানীরা নতুন ডেলিভারি মেকানিজম তৈরি করেছেন, যা বিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানেও কাজ করে। বেশি বাচ্চাদের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। নতুন ভ্যাকসিন শিশুদের রোটাভাইরাসের মতো মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করছে।

সীমিত সম্পদের এই বিশ্বে আপনাকে বেশি প্রভাব তৈরির উপায় খুঁজে বের করতে হবে। উদ্ভাবনের মাধ্যমে ১ ডলার খরচের বিপরীতে সর্বাধিক লাভের চাবিকাঠি পাওয়া যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নতুন আবিষ্কারের হারকে দারুণ গতিতে ত্বরান্বিত করছে, যা আমরা আগে কখনো দেখিনি। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রভাব দেখা যাচ্ছে নতুন ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে। নতুন ওষুধ আবিষ্কারের জন্য প্রচুর তথ্য প্রয়োজন হয়। এআই সেই প্রক্রিয়ায় দারুণ গতি দিতে পারে। কিছু প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে এই উপায়ে ক্যানসারের নতুন ওষুধ তৈরির জন্য কাজ করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। দরিদ্রদের প্রভাবিত করে এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে।

এআই উদ্ভাবনের বিস্তারে চোখ

আমরা এ মুহূর্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর উদ্ভাবনের বিস্তৃতির দিকে নজর দিচ্ছি। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে জীবন উন্নত করতে নানান প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছি। কতটা সৃজনশীলতা আনা যায়, তা নিয়ে আমরা অপেক্ষা করছি। বর্তমানে অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি আমরা। এই যেমন, এআই কি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধে লড়াই করতে পারে? অ্যান্টিবায়োটিক যদি আপনি বেশি ব্যবহার করেন, তাহলে নানা ধরনের প্যাথোজেন অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। একে বলা হয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বা এএমআর। সারা বিশ্বে এটি একটি বিশাল সমস্যা। বিশেষ করে আফ্রিকায় এর কারণে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।

ঘানার অরুম ইনস্টিটিউটের নানা কফি কুয়াকি একটি এআই-চালিত টুল নিয়ে কাজ করছেন। এটি স্বাস্থ্যকর্মীদের এমন অ্যান্টিবায়োটিকের ধারণা দেয়, যা এএমআর নয়। এই টুলটি স্থানীয় ক্লিনিক্যাল নির্দেশিকা ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ডেটার বিশ্লেষণ করে কোন রোগজীবাণু প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঝুঁকিতে রয়েছে, তা জানতে সহায়তা করে। সর্বোত্তম ওষুধ, ডোজ ও সময়সীমার জন্য পরামর্শ দিতে পারবে এই এআই টুল।

আমাদের আরও প্রশ্ন আছে। এআই কি উচ্চঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে? প্রতি দুই মিনিটে একজন নারী সন্তান প্রসবের সময় মারা যায়। এটি একটি ভয়ংকর পরিসংখ্যান। আমি আশাবাদী, এ ক্ষেত্রে এআই সাহায্য করতে পারে। এআইচালিত আলট্রাসাউন্ড গর্ভাবস্থার ঝুঁকি শনাক্ত করার বিষয়ে গত বছর আমি লিখেছিলাম। এ বছর আমি আর্মম্যানের গবেষকদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই। তারা ভারতে নতুন মায়েদের জন্য সেবা উন্নত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে। তারা লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) উচ্চঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণের চিকিৎসায় ব্যবহার করছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য কো-পাইলট হিসেবে এটি কাজ করবে। ইংরেজি ও তেলেগু উভয় ভাষাতেই এই টুলটি ব্যবহার করা যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো দিক হলো এই এআই টুলটি যিনি ব্যবহার করবেন, তার অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তিত হবে।

আমরা জানতে চাই, এআই কি এইচআইভি ঝুঁকি নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে কি না। অনেকের জন্য যৌন ইতিহাস ডাক্তার বা নার্সের কাছে বলা অস্বস্তিকর। এইচআইভির মতো রোগের ঝুঁকি নির্ণয় ও প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা নির্ধারণের জন্য এসব তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন একটি দক্ষিণ আফ্রিকান চ্যাটবট এইচআইভি ঝুঁকি মূল্যায়নকে অনেক সহজ করছে। এই টুলটি নিরপেক্ষ ও কোনো ধরনের নেতিবাচক ধারণা ছাড়াই ২৪ ঘণ্টা পরামর্শ দিতে পারে। সোফি প্যাস্কো ও তার দল প্রান্তিক ও দুর্বল জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে এটি তৈরি করছে। এই উদ্ভাবনী টুলটি নারীদের নিজেদের ঝুঁকি বুঝতে ও নিজেদের রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করতে পারে।

কীভাবে এআইকে আরও ন্যায়সংগত করা যায়, তা সম্পর্কে আমরা বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থা থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। এআইকে অবশ্যই যারা ব্যবহার করবে, তাদের জন্য উপযোগী করে বানাতে হবে। একটি মেডিকেল অ্যাপের কথা বলতে পারি। সেই অ্যাপের মাধ্যমে পাকিস্তানের মানুষেরা একটি টেক্সট বা ই-মেইল পাঠানোর পরিবর্তে একে অপরকে ভয়েস নোট পাঠাতে পারে। দীর্ঘ প্রশ্ন টাইপ করার পরিবর্তে ভয়েস কমান্ডের ওপর নির্ভর করে একটি অ্যাপ তৈরি করা বেশ কাজের। অ্যাপটি উর্দুতে তৈরি করা হয়েছে বলে অনুবাদের কোনো সমস্যা হয় না। আমরা যদি এখনই স্মার্ট বিনিয়োগ করি, তাহলে এআই-বিশ্বকে আরও ন্যায়সংগত হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

এআই ধনী বিশ্বের যেকোনো উদ্ভাবনকে দ্রুত সময়ে দরিদ্র বিশ্বে নিয়ে যেতে পারে।
একটি শিশুর জন্মের আগে তার অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম উন্নত করার সম্ভাবনা নিয়েও আমি বেশ উত্তেজিত। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, একটি শিশুর মাইক্রোবায়োম তাদের মায়ের সঙ্গে সংযুক্ত। গর্ভাশয়ের প্রদাহের চিকিৎসা করলে প্ল্যাসেন্টা ও বিকাশমান ভ্রূণের চিকিৎসায় সুবিধা আসবে।

পারমাণবিক শক্তি দৈত্য নয়

গত বছর আমি পারমাণবিকের শক্তির সামগ্রিক স্বীকৃতির দিকে একটি বড় পরিবর্তন লক্ষ করেছি। অতীতে আমাকে পারমাণবিক শক্তি বিশেষ কোনো দৈত্য নয় বলে বারবার বোঝাতে হতো। ইদানীং এই প্রযুক্তিকে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে আমি ভাবনার কাজ করছি। কপ সম্মেলনে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় দুই ডজন দেশ পারমাণবিক ক্ষমতা তিন গুণ করার অঙ্গীকার দেখে আমি বেশ আগ্রহ বোধ করছি। আমি মনে করি, এসব পরিবর্তনের ব্যবহারিক কারণ রয়েছে। পারমাণবিক শক্তি কার্বনমুক্ত শক্তির উৎস, যা বিশ্বস্তভাবে সব সময় শক্তি সরবরাহ করতে পারে। সব ঋতুতে পৃথিবীর প্রায় যেকোনো জায়গায় বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে পারে। বিভিন্ন দেশ জলবায়ু পরিকল্পনায় অগ্রগতি করছে বলে ক্রমবর্ধমান শক্তির প্রয়োজন মেটাতে পারমাণবিক শক্তির দিকে আগ্রহী হচ্ছে।

পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পারমাণবিক প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলছি। কয়েক দশক ধরে পারমাণবিক প্রযুক্তি বেশ স্থবির ছিল। চেরনোবিল ও থ্রি মাইল আইল্যান্ডের মতো ভয়ানক বিপর্যয় পারমাণবিক শক্তির সঙ্গে ঝুঁকির বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। সমস্যা সমাধানে কাজ করার পরিবর্তে আমরা পারমাণবিক শক্তি নিয়ে গবেষণাকে বন্ধ করে দিয়েছি। এখন পরিবর্তন আবারও শুরু হয়েছে। আমি ২০০৮ সালে টেরা পাওয়ার প্রতিষ্ঠা করি। আমি বেশ আশাবাদী। এ বছরের শুরুর দিকে আমি ওয়াইমিংয়ের কেমেরারে স্থাপিত প্রথম প্ল্যান্টে গিয়েছিলাম। ২০৩০ সালে এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত পারমাণবিক স্থাপনা। এটি অনেক নিরাপদ হবে ও প্রচলিত চুল্লির তুলনায় অনেক কম বর্জ্য উৎপন্ন করবে।

উদ্ভাবন অগ্রগতির চাবিকাঠি

আমি একবার লিখেছিলাম, কেন আমি বিশ্বাস করি, উদ্ভাবনই অগ্রগতির চাবিকাঠি। উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং বেসরকারি খাতের নেতৃত্ব উভয়ই প্রয়োজন। সারা বিশ্বের ভোটাররা জাতীয়, রাজ্য এবং স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব নির্বাচন করেন, আমি মনে করি, আমাদের বিবেচনা করা উচিত কোন ধরনের নেতারা আমাদের প্রয়োজনীয় উদ্ভাবনগুলো চালাতে পারেন।

২০২৪ সালের জন্য প্রস্তুত আমরা। আমি আমার বন্ধু চাক ফিনিকে ইদানীং অনেক মনে করছি, যে গত অক্টোবরে মারা গেছে। সে জীবন থাকতে দান করার ধারণাকে জনপ্রিয় করে। আরেকটি বছর শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, আমি নিজে সেই ধারণায় আরও বেশি কাজ করতে চাই।

যেভাবে আমার সম্পদ ব্যবহার করতে পারি

নিজেকে আমি ক্রমাগত একটি প্রশ্ন করি। আমি কীভাবে আমার সম্পদ ব্যবহার করতে পারি অনেক বেশি ভাগ মানুষের জন্য তা জানতে চাই। এখন ও ভবিষ্যতে কীভাবে ব্যবহার করব, তা নিয়ে কখনো কখনো আমি স্পষ্ট উত্তর পাই। যখন আমি কোনো উত্তর পাই না, তখন আমার সহকর্মী, পরিবার ও বন্ধুদের কাছে ফিরে যাই। তারা প্রায়ই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নৈতিকভাবে স্বচ্ছতা নিয়ে নানান তথ্য দেয় আমাকে।
আমার বাচ্চাদের বড় হতে দেখে আমি আনন্দিত। এ বছর আমার কনিষ্ঠ সন্তান ফিবির সঙ্গে আমি এক মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলাম। তরুণেরা কীভাবে বিশ্বকে দেখে, আর সর্বশেষ টিকটক ট্রেন্ড জানতে আমার তিন সন্তান আমাকে সহায়তা করে।

আমি তাদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে ও নিজেকে কিছুটা অনুপ্রাণিত করতে উন্মুখ থাকি। যখন আমি আমার বাচ্চাদের বয়সে ছিলাম, আমি ছুটিতে বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু আমি যত বড় হয়েছি আর যখন বাবা হয়েছি, তখন আমি বুঝতে পেরেছি, কাজের চেয়ে জীবনে আরও অনেক কিছু আছে। আমি আশা করি, আপনি আসছে ছুটির সময়ে কাজে ডুব দেওয়ার আগে সময় নেবেন। এ সময় মজা করুন, আরাম করুন।

ভাষান্তর: জাহিদ হোসাইন খান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.