২৫ বছর ধরে রোগীদের সেবা করে যাচ্ছেন সবার প্রিয় ‘সুজিতা দিদি’

0
122
সুজিতা ঘাগ্রা

পেশায় তিনি সরকারি হাসপাতালের নার্স। তবে সবার কাছে তিনি পরিচিত ‘দিদি’ নামে। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা চিকিৎসক—সবার কাছেই তিনি একনামে পরিচিত। সবার প্রিয় এই নারী হলেন সুজিতা ঘাগ্রা (৫৫)। তিনি নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স।

টানা ২৫ বছর ধরে রোগীদের সেবা দিয়ে আসছেন সুজিতা ঘাগ্রা। তাঁর বাড়ি উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের মনগড়া গ্রামে। বাবা আব্রাহাম হাজং ও মা টিলনি ঘাগ্রার চার সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ১৯৯৫ সালে সুজিতা একই উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের পরিতোষ রেমাকে বিয়ে করেন। পরিতোষ একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। বর্তমানে অবসরে আছেন। পরিতোষ আর সুজিতার একমাত্র ছেলে শুভ সঞ্জিব ঘাগ্রা সেনা কর্মকর্তা।

নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা সুজিতা ১৯৮৬ সালে স্থানীয় বরুয়াকোনা সাধু ফেডারিক উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে তিনি ময়মনসিংহ নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা করে ওয়ার্ল্ড ভিশন নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় নার্স হিসেবে চাকরি নেন। এরপর ১৯৯৮ সালে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্স হিসেবে যোগদান করেন। সেই থেকে তিনি ওই হাসপাতালে সেবা দিয়ে আসছেন।

কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জমিদাতা মনতলা এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি চন্দন বিশ্বাস বলেন, ‘সুজিতা এই উপজেলার প্রায় সবার কাছেই দিদি হিসেবে পরিচিত। সুজিতা একজন সংবেদনশীল মানুষ। রোগীদের জন্য ভরসার জায়গা তিনি। সব সময় রোগীর পাশে তিনি সহানুভূতি ও মমতার হাত বাড়িয়ে দেন। এতে রোগীর রোগের চিকিৎসা ও মনের চিকিৎসা—দুটোই একসঙ্গে হয়। তাঁকে কখনো ক্লান্তিবোধ করতে কিংবা রোগীদের সঙ্গে বিরক্ত হতে দেখিনি।’

গত বুধবার বিকেলে পেটের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাসাউড়া গ্রামের রূপন সাহা। তিনি  বলেন, সুজিতা ঘাগ্রা সিনিয়র নার্স হলেও রোগীদের খোঁজখবর নেন। তিনি রোগীদের মায়ের মতো সেবা দেন। শুধু সেবা নয়, তিনি রোগীকে মানসিক শক্তিও জোগান।

সুজিতার প্রশংসা করে রূপন সাহা আরও বলেন, ‘গতকাল আমি পেটের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ওষুধ লেখে দেন। তবে ওষুধ খাওয়ার পরও ব্যথা কমছিল না। এরপর দিদি আমার পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করেন, “দাদা, আপনার বাড়ি কোন গ্রামে? কয় ছেলেমেয়ে? তারা এখন কী করে?” গল্প শুরু করার কিছুক্ষণ পর কীভাবে যেন আমার ব্যথা কমতে শুরু করল।’

সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর অনেক রোগী ভালোবেসে সুজিতাকে দেখতে আসেন, খোঁজখবর নেন। সুজিতা গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, ‘রোগীদের সেবা করতে পারাটাই আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দ। তাঁদের ভালোবাসাই আমার সম্পদ। অনেক রোগী সুস্থ হয়ে বাড়িতে যাওয়ার পরও আমার খোঁজখবর নেন। এটা আমাকে আরও প্রেরণা জোগায়। প্রার্থনা করবেন, এভাবেই যেন জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারি। এটাই আমার কাছে শান্তির জায়গা।’

কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, এ হাসপাতালে যোগদানের পর থেকেই সুজিতা ঘাগ্রা নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। একজন নার্সের যা যা গুণাবলি থাকা প্রয়োজন, সবগুলোই তাঁর মধ্যে বিদ্যমান। রোগী থেকে শুরু করে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.