পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে সাইবার হামলা চালানোর দাবি করেছে হ্যাকার গ্রুপ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৫টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে আক্রমণ চালানো হয়েছে। এ সময় কয়েক হাজার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করেছে এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য ডার্ক ওয়েবে ছেড়েও দিয়েছে তারা।
হ্যাকার দলের টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গ্রুপ ঘেঁটে এসব তথ্য জানা গেছে। হ্যাকার দলটি নিজেদের ভারতীয় বলে দাবি করেছে। তবে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিমের (সার্ট) প্রকল্প পরিচালক সাইফুল আলম খান দাবি করেছেন, কয়েকটি ওয়েবসাইট ছোট আক্রমণের কবলে পড়লেও বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।
গত ৩০ আগস্ট হ্যাকার গ্রুপ ১৯ সেপ্টেম্বর সাইবার হামলা এবং ৩ সেপ্টেম্বর আরেক ঘোষণায় ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে হামলা চালানোর হুমকি দেয়। এ বিষয়ে ৯ সেপ্টেম্বর সতর্কতা জারি করে সার্ট। পরে ১২ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এ সময় তারা সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়। এর আগে ১৫ আগস্ট সাইবার হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ১৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬টি ওয়েবসাইট ও নেটওয়ার্কে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় দাবি করা হ্যাকার গ্রুপ। এ সময় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য চুরির ঘটনাও ঘটে।
জানা গেছে, গতকালের হামলাগুলোর অধিকাংশই ডি-ডস আক্রমণ। এ প্রক্রিয়ায় ট্রাফিক বাড়িয়ে দিয়ে ওয়েবসাইটগুলো অচল করে রাখা হয়। এ ছাড়া কয়েক ওয়েবসাইটে ম্যালওয়্যার আক্রমণের মাধ্যমে শতাধিক মেগাবাইট ডেটা হ্যাক করা হয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, হ্যাকার গ্রুপগুলোর দাবি অনুসারে ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর অধিকাংশই কক্সবাজার জেলার। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১১২ মেগাবাইট তথ্য হ্যাক করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি বড় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে। ওয়েবসাইটগুলোর একটিতে গতকাল সন্ধ্যায় প্রবেশ করা যায়নি। অন্য একটিতে হ্যাকার গ্রুপ নিজেদে পরিচিতি ঝুলিয়ে রেখেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তিনটি নেটওয়ার্কে হামলার দাবি করেছে হ্যাকার দল। একটি বাহিনীর সদস্যদের ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাক করা হয়েছে দাবি করে কয়েকজনের তথ্য শেয়ারও করেছে হ্যাকাররা। যাতে সদস্যদের ও তাদের আত্মীয়দের নাম, পরিচিতি ও মোবাইল নম্বর রয়েছে।
হ্যাকার গ্রুপগুলো দুটি বেসরকারি হাসপাতালে আক্রমণের দাবি করেছে। পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সাইটেও আক্রমণের দাবি করেছে। তবে এনআইডি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, নিরাপত্তাজনিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত এনআইডি সার্ভার বন্ধ রয়েছে। এর আগে ১৫ আগস্ট সাইবার হামলার হুমকির সময় ৩৮ ঘণ্টা সার্ভার সেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল। এনআইডির তথ্যভান্ডারে প্রায় ১২ কোটি ভোটারের কমবেশি ৩০ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে।