১৫০ কোটি ফেসবুক গ্রাহকের তথ্য বিক্রি!

প্রাইভেসি অ্যাফেয়ার্সের চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন

0
342
ফেসবুক লোগো

১৫০ কোটি ফেসবুক গ্রাহকের তথ্য বিক্রি হয়ে গেছে একটি হ্যাকার ফোরামের কাছে। গতকাল মঙ্গলবার রোমানিয়াভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘প্রাইভেসি অ্যাফেয়ার্সে’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গত সোমবার রাতে ফেসবুকের ইতিহাসে ২০১৯ সালের পর বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঘটনায় নানা দিক থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল, এ কারণে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য বেহাত হচ্ছে কিনা। ঠিক পরদিনই প্রকাশিত প্রাইভেসি অ্যাফেয়ার্সের এই প্রতিবেদন নতুন চমকের সৃষ্টি করেছে। যদিও প্রাইভেসি অ্যাফেয়ার্স বলছে, ৪ অক্টোবরের বিপর্যয়ের সঙ্গে ১৫০ কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য বিক্রির কোনো সম্পর্ক নেই। এ ঘটনা ঘটেছে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে। ফেসবুকের একজন মুখপাত্রও মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বিপর্যয়ের এ সময়ে কোনো ব্যবহারকারীর ডাটা বেহাত হওয়ার প্রমাণ তারা পাননি। তিনি বলেন, ব্যাকবোন রাউটারের কনফিগারেশনে পরিবর্তন আনার সময় কারিগরি ত্রুটির কারণে গত সোমবার রাতে বন্ধ হয়ে যায় ফেসবুক, মেসেঞ্জার এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের সেবা। প্রায় ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর ত্রুটি কাটিয়ে ওঠে সেবা চালুতে সক্ষম হন ফেসবুক প্রকৌশলীরা।

গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত :এদিকে প্রাইভেসি অ্যাফেয়ার্স মঙ্গলবার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘ওয়েব স্ট্ক্র্যাপারস’ হিসেবে পরিচিত ওয়েবসাইট থেকে তথ্য চুরিতে নিয়োজিত একটি গ্রুপের কাছ থেকে তারা জানতে পেরেছে, সাম্প্রতিক সময়ে তারা ফেসবুক থেকে প্রায় ১৫০ কোটি গ্রাহকের তথ্য একটি হ্যাকার ফোরামের কাছে বিক্রি করেছে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে এই তথ্য বিক্রি হওয়ার কথা দাবি করেছে ওয়েব স্ট্ক্র্যাপাররা। সেই দাবির সমর্থনে তারা কিছু প্রমাণও দিয়েছে। এই কেনার ক্ষেত্রে প্রতি এক মিলিয়ন বা ১০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্যের জন্য পাঁচ হাজার ডলার মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে ক্রেতা হ্যাকার ফোরামকে। অর্থাৎ দেড়শ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য কিনতে হ্যাকার ফোরামের ব্যয় হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। প্রাইভেসি অ্যাফেয়ার্সের প্রতিবেদনে ওয়েব স্ট্ক্র্যাপারস ও হ্যাকারদের পাঠানো ই-মেইল বার্তার কিছু স্ট্ক্রিনশটও সংযুক্ত করা হয়েছে। যেখানে ওয়েব স্ট্ক্র্যাপারদের গ্রুপটি তাদের কাছে থাকা ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য শতভাগ ‘জেনুইন’ বলে দাবি করেছে। তবে কোন হ্যাকার গ্রুপ তথ্য কিনে নিয়েছে, তার নাম প্রকাশ করা হয়নি প্রতিবেদনে।

ফেসবুকে সোমবারের বিপর্যয় যে কারণে :ফেসবুকের মুখপাত্র বিবৃতিতে জানান, ফেসবুকের ডাটা সার্ভারগুলোর মধ্যে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক সমন্বয় করা রাউটারটির কনফিগারেশনে পরিবর্তন করার সময় ডাটা আদান-প্রদান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে উল্লিখিত সেবাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় রাউটারটির ত্রুটি দূর করা হয় এবং ফেসবুকের সেবাগুলো অনলাইনে ফিরে আসে। এখন পুরো কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে ফেসবুক প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। ফেসবুকের সেবা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে ব্যবহারকারীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে বিবৃতিতে। সেখানে আরও বলা হয়, কারিগরি ত্রুটির কারণে ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হওয়ার কোনো প্রমাণ ফেসবুকের কাছে নেই।

ফেসবুকের বিপর্যয়ের ব্যাপারে সংশ্নিষ্ট বিশেষজ্ঞ সূত্রে আরও জানা গেছে, রাউটারে নতুন কনফিগারেশনটি চলছিল ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপের মধ্যে একটি কমন সুইচ প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য। এর মাধ্যমে ফেসবুক এবং এর অধীন মাধ্যমগুলোর মধ্যে প্রয়োজনীয় ডাটা আদান-প্রদান সহজ হতো। কিছুদিন আগে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ফেসবুকের সঙ্গে ডাটা আদান-প্রদানে সম্মতি আদায় করে নেয়। এর পরই সেবাগুলোর মধ্যে একটি কমন সুইচ প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য রাউটিং কনফিগারেশন হালনাগাদ করার কাজ শুরু করে। সেই কাজটি চলমান থাকা অবস্থায় পুরো রাউটিং ব্যবস্থায় বড় ধরনের কারিগরি ত্রুটি দেখা যায় এবং ফেসবুক ও এর অধীন সবগুলো অনলাইন সেবা বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সেই কারিগরি ত্রুটি সারিয়ে তোলার প্রাথমিক কাজটি হয়েছে। এখন আগের ত্রুটিগুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে কনফিগারেশনের কাজ চলছে। সূত্র আরও জানায়, এবার বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের মতো সার্ভারের ত্রুটি ঘটেনি। সেবার ফেসবুক বন্ধ ছিল টানা ১৪ ঘণ্টা।

ছয়শ কোটি ডলারের ক্ষতি : ইয়াহু ফাইন্যান্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবারের এ ধাক্কায় ফেসবুকের শেয়ারের দাম ৪ দশমিক ৯ শতাংশ কমে গেছে। আর মধ্য সেপ্টেম্বর থেকেই ফেসবুকের শেয়ারের দর ১৫ শতাংশের মতো কমে এসেছিল। সবমিলিয়ে সোমবারের বিপর্যয়ের পর ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬০০ কোটি ডলার। আর এই ক্ষতির কারণে ফেসবুকপ্রধান জাকারবার্গের নিট সম্পদ কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ১৬০ কোটি ডলারে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় মাইক্রোসফটের বিল গেটসের চেয়ে এক ধাপ নিচে নেমে গেছেন তিনি। এখন শীর্ষ ধনীর তালিকায় বিল গেটস রয়েছেন চার নম্বরে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.