ফের সাত পণ্যের কোটার প্রস্তাব পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ

0
129

চাল, গম, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, আদা ও রসুন আমদানিতে বাংলাদেশের জন্য বার্ষিক কোটা রাখতে ভারত সরকারের কাছে ফের প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। গতকাল রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের নেতৃত্বে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পণ্যের সংখ্যা ও পরিমাণ সংশোধন করে গতকালই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শিগগিরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা প্রস্তাব আকারে ভারত সরকারের কাছে পাঠাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিবছর সাড়ে ১৫ লাখ টন চাল, ২৬ লাখ টন গম, ১০ লাখ টন চিনি, ১ লাখ টন মসুর ডাল, ৮ লাখ টন পেঁয়াজ, ৫০ হাজার টন আদা এবং ৭০ হাজার টন রসুন আমদানির কোটা চায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৫ থেকে ৮ লাখ টন চাল, ৫ থেকে ৭ লাখ টন গম, ১ লাখ টন মসুর ডাল এবং ২০ হাজার টন পেঁয়াজ সরকারিভাবে আমদানি করা হবে। বাকি চাল, গম, পেঁয়াজ ও অন্যান্য পণ্য বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা আমদানি করবেন।

গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বাড়তি চাহিদা অনুযায়ী বিশ্ববাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে পণ্যভিত্তিক সুনির্দিষ্ট টাইম লাইনসহ সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করে এসব পণ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি বলেন, গতকালের বৈঠকে কোটা দেওয়ার বিষয়ে ভারত বেশ ইতিবাচক ছিল। বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে আবারও প্রস্তাব পাঠাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভারত সরকারের নির্ধারিত রপ্তানি শুল্ক পরিশোধ করেই কোটার আওতায় পণ্য আমদানি করতে হবে। তবে কোটা পাওয়ার সুবিধা হচ্ছে, ভারত কোনো পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও নির্ধারিত কোটা পর্যন্ত পণ্য পাবে বাংলাদেশ। কোটা না থাকায় দেশটি হঠাৎ করে কোনো পণ্য রপ্তানি বন্ধ করলে তার প্রভাব পড়ে দেশের বাজারে।

এর আগে গত ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের সভায় বাংলাদেশ খাদ্যপণ্য সরবরাহের অনিশ্চয়তার কারণে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও মসুর ডাল– এই সাতটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে আলাদা কোটা চাওয়া হয়। তবে ডাল বাদে ছয়টি পণ্যে কোটা দিতে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয় ভারত।

ওই সময় প্রতিবছর ২০ লাখ টন চাল, ৪৫ লাখ টন গম, ৭ লাখ টন পেঁয়াজ, ১৫ লাখ টন চিনি, ৩০ হাজার টন মসুর ডাল, ১ লাখ ২৫ হাজার টন আদা ও ১০ হাজার টন রসুনের কোটা চায় বাংলাদেশ। কিন্তু অন্তত ১০ বছরের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব পণ্যের পরিমাণ পুনর্নির্ধারণ করে আবার প্রস্তাব পাঠাতে বলে ভারত সরকার।

এ জন্য গত জানুয়ারিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১৫ লাখ টন চাল, ২৫ লাখ টন গম, ৬ লাখ টন পেঁয়াজ, ১০ লাখ টন চিনি, ১ লাখ টন আদা এবং ৫০ হাজার টন রসুনের বার্ষিক সংশোধিত কোটার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, ভারতের সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ একটি ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। তাই গতকাল দুই দেশের মধ্যে বৈঠক হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে ভারত পেঁয়াজ ও গম রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় সমস্যায় পড়ে বাংলাদেশ। সম্প্রতি চাল রপ্তানি বন্ধ করেছে ভারত। কিন্তু নিত্যপণ্য আমদানিতে বার্ষিক কোটা দিলে সামগ্রিকভাবে কোনো পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করলে বাংলাদেশ তার আওতায় থাকবে না। ভুটান ও মালদ্বীপকে এ সুবিধা দিয়ে আসছে ভারত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.