৩০০ কোটি টাকায় বঙ্গবন্ধু টানেলের দুই প্রান্তে বসছে স্ক্যানার

0
107
উদ্বোধনের অপেক্ষায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সম্প্রতি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম যোগাযোগ পথ—বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। ২৮ অক্টোবর টানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন থেকে শুরু হবে যান চলাচল। উদ্বোধনের আগমুহূর্তে এখন টানেলের দুই প্রান্তে একটি করে স্ক্যানার বসানোর কাজ চলছে।

টানেলের প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, টানেলের নির্মাণকাজের শুরুর পর্যায়ে দুই প্রান্তে স্ক্যানার বসানোর পরিকল্পনা ছিল না। মেয়াদের শেষ মুহূর্তে এসে নিরাপত্তার কারণে টানেলের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে স্ক্যানার বসানোর সিদ্ধান্ত হয়, যাতে টানেলের ভেতরে প্রবেশের আগেই গাড়িগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়। দুই প্রান্তে দুটি করে চারটি স্ক্যানার বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই চারটি স্ক্যানারের জন্য ব্যয় হচ্ছে ৩০০ কোটি টাকা।

প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী গতকাল বুধবার বলেন, টানেল চালুর আগেই দুটি স্ক্যানার বসানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। বাকি দুটি স্ক্যানার আগামী মাসে দেশে আসবে। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে তা স্থাপন করা হবে।

টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেলটি নদীর তলদেশের ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে। এটি পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ মিনিট। টানেলের ভেতরে গাড়ির সর্বোচ্চ গতি ৮০ কিলোমিটার। তবে শুরুতে গতি কিছুটা কম রাখা হতে পারে।

সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, স্থাপন করা স্ক্যানারগুলো টানেলের ভেতর দিয়ে যাওয়া পণ্যবাহী ভারী গাড়িগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। চালক ও পণ্য রাখার অংশ আলাদা রঙের রশ্মি দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। একেকটি গাড়ি স্ক্যান করতে সর্বোচ্চ দুই মিনিট সময় লাগবে। প্রতিটি স্ক্যানার প্রায় ৫০ মিটার লম্বা এবং প্রশস্ততা ১০ মিটার। এগুলোর একেকটির ওজন ১৩ টন করে। এসব স্ক্যানার আনা হচ্ছে ইংল্যান্ড থেকে।

দেশের প্রথম টানেলের নামকরণ করা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে চীনের চায়না কমিউনিকেশনস, কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসিএল) লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের কাজ পেয়েছে। টানেল নির্মাণে এখন ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এটির এক প্রান্তে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা ও অপর প্রান্তে আনোয়ারা উপজেলা।

টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেলটি নদীর তলদেশের ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে। এটি পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ মিনিট। টানেলের ভেতরে গাড়ির সর্বোচ্চ গতি ৮০ কিলোমিটার। তবে শুরুতে গতি কিছুটা কম রাখা হতে পারে।

স্ক্যানারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে ইউভিএসএস (আন্ডারভেহিকেল স্ক্যানিং সিস্টেম)। ইউভিএসএস দিয়ে ট্রাক, বাস, মাইক্রোবাস, কারসহ যানবাহনের নিচের অংশে ছবি তুলে বিস্ফোরকজাতীয় সরঞ্জাম আছে কি না, তা যাচাই করা যায়।

সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন (ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট) অনুযায়ী, টানেল চালুর প্রথম বছর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৭ হাজার ৩৭৪টি গাড়ি চলাচল করবে টানেলের ভেতর দিয়ে। এর মধ্যে ভারী গাড়ি থাকবে ৩ হাজার ২১৮টি। এরপর প্রতিবছরেই এর পরিমাণ বাড়বে।

এদিকে পণ্যবাহী যানবাহনগুলো স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করা হলেও টানেলের ভেতর দিয়ে যাওয়া কার, মাইক্রোবাস, বাসসহ এ ধরনের পরিবহনের জন্য আলাদাভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। স্ক্যানারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে ইউভিএসএস (আন্ডারভেহিকেল স্ক্যানিং সিস্টেম)। ইউভিএসএস দিয়ে ট্রাক, বাস, মাইক্রোবাস, কারসহ যানবাহনের নিচের অংশে ছবি তুলে বিস্ফোরকজাতীয় সরঞ্জাম আছে কি না, তা যাচাই করা যায়।

সেতু কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা জানান, টানেলের প্রথম উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) স্ক্যানার স্থাপনের বিষয় উল্লেখ ছিল না। কিন্তু পরবর্তী সংশোধিত ডিপিপিতে ৮টি স্ক্যানার স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। তবে প্রকল্পের মূল বাজেটে এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়নি। এর পরিবর্তে টোল আহরণ ও রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) লিমিটেড এই স্ক্যানারগুলো স্থাপন করছে। সরকারের পক্ষ থেকে সেই টাকা পরিশোধ করা হবে।

চট্টগ্রাম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.