হাসান সরকারের কৌশলে স্থানীয় বিএনপির আপত্তি

ইজাজ আহ্‌মেদ মিলন, গাজীপুর

0
200

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা সরকার শাহ নূর ইসলামের (রনী) প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি কোনোভাবেই অংশ নিচ্ছে না– এটাই দলের সিদ্ধান্ত। কিন্তু সাবেক সংসদ সদস্য হাসান সরকার বলেছেন, এটা তাদের নির্বাচনী কৌশল।

এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিএনপি কোনো কৌশলেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।

হাসান সরকার ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। এবার তাঁর ভাতিজা রনী সরকার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে দাবি করছেন, তাঁর প্রতি বিএনপির মৌন সমর্থন রয়েছে। তবে স্থানীয় বিএনপি নেতারা রনী সরকারের এই প্রচারণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এমনকি বিএনপির পদধারী যে নেতারা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন তাঁরাও বলছেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাঁরা নির্বাচন করছেন। রনী সরকারের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দলের স্থানীয় নেতারা বলছেন, হাসান সরকার প্রবীণ নেতা। তাঁর প্রতি নেতাকর্মীর অশেষ শ্রদ্ধা রয়েছে। তবে হাসান সরকার মানেই বিএনপি নয়, তার কথা দলের কথা নয়।

রনী সরকার বলছেন, তাঁর প্রতি স্থানীয় বিএনপির সমর্থন রয়েছে। তবে দলীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে তেমন যোগাযোগ হয়নি। আর যোগাযোগ হলেও নানা বাধ্যবাধকতার কারণে নেতাকর্মীরা এই মুহূর্তে স্বীকার করবেন না।

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শওকত হোসেন সরকার বলেন, হাসান সরকার বা তাঁর ভাতিজার বক্তব্য বিএনপির বক্তব্য নয়। এটা তাঁদের ব্যক্তিগত অবস্থান। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের কেন্দ্র থেকে ইতোমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সিটি নির্বাচনে বিএনপির কেউ প্রার্থী হতে পারবে না, এমনকি কাউকে সমর্থনও করতে পারবে না। দলের মৌন সমর্থন রয়েছে– এমন দাবি করে বিএনপিকে তাঁরা বিভ্রান্ত করছে। তিনি বলেন, বিএনপির যে নেতাকর্মীরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাজীপুরের স্থায়ী বাসিন্দা ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল ইসলাম বলেন, হাসান সরকার ও রনী সরকারের বক্তব্য বিএনপিকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। সিটি নির্বাচনে বিএনপি কাউকে মৌন সমর্থন করেনি এবং করার সুযোগও নেই।

মহানগরের কোনাবাড়ী থানা বিএনপির সদস্য সচিব মো. বাবুল হোসেন বলেন, হাসান সরকার মনগড়া কথা বলে বেড়াচ্ছেন। এতে দলের ক্ষতি হচ্ছে। রনীকে সমর্থন করেছেন এমন একজন নেতার নামও তাঁরা বলতে পারবেন না। হাসান সরকার ব্যক্তিগতভাবে তাঁর ভাতিজাকে সমর্থন করছেন। দলের মৌন সমর্থন রয়েছে, এটা সঠিক নয়।

হাসান উদ্দিন সরকার অবশ্য বলছেন, তাঁর ভাতিজা মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন কিন্তু বিএনপিতে তাঁর কোনো পদ নেই। কেন্দ্রীয় বিএনপির সিদ্ধান্ত না থাকলেও স্থানীয় বিএনপির মৌন সমর্থনেই রনী প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা কাকে ভোট দেবেন– এমন প্রশ্ন রেখে হাসান সরকার বলেন, আওয়ামী লীগকে খালি মাঠ ছেড়ে দেওয়া হবে না। মহানগরের ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রায় প্রতিটিতেই বিএনপির প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।

২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর হান্নান মিয়া হান্নু জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পরে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। বর্তমানে মহানগর বিএনপির সদস্য। গত দুটি সিটি নির্বাচনেই তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে কাউন্সিলর হন। এবারও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে দলের কোনো সিদ্ধান্ত তিনি জানেন না। তিনি বলেন, কাউন্সিলর পদের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে না। এ ব্যাপারে দলীয় কোনো সিদ্ধান্তও তিনি পাননি। তার পরও দল যদি নির্দেশনা দেয়, সেটাই মেনে নেবেন।

২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূঁইয়া। তিনিও গত দুটি সিটি নির্বাচনে জয়ী হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। গাজীপুর মহানগর সদর বিএনপির সভাপতি হাসান আজমল এবারও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো নির্দেশনা এলে নতুন সিদ্ধান্তের জন্য তিনি প্রস্তুত রয়েছেন।

এই দুই কাউন্সিলর প্রার্থীসহ একাধিক বিএনপি নেতা জানিয়েছেন, কাউন্সিলর প্রার্থীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর সঙ্গে রনী সরকারের প্রার্থিতার কোনো যোগসূত্র নেই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.