হত্যার সাড়ে তিন বছর পর …

0
686
গ্রেপ্তারের পর আনোয়ার হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

মিরপুরের দক্ষিণ বিশিল এলাকার নিউ শাহজালাল আবাসিক হোটেলের মালিক ছিলেন রফিকুল ইসলাম (৪০)। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে হোটেলটির ব্যবস্থাপক শাহ আলমের কাছ থেকে হিসেব বুঝে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন রফিকুল ইসলাম। কিন্তু রাতে আর বাড়ি ফিরে যাননি। পরে ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁর গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায় দারুস সালাম রোড পাইকপাড়া সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার জামে মসজিদের সামনে ফুটপাতে।

এ ঘটনায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন রফিকুল ইসলামের ছোট ভাই সাঈদ হোসেন। কিন্তু এ হত্যার প্রধান আসামি কে? দীর্ঘ তদন্ত শেষে বেরিয়ে আসে আনোয়ার হোসেনের নাম।

২২ বছর বয়সী আনোয়ার হোসেন ঘটনার পর প্রায় সাড়ে তিন বছর পলাতক ছিলেন। অবশেষ গতকাল সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকা হতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) একটি দল তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

পিবিআইয়ের ভাষ্য, আনোয়ার হোসেন শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদত গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড। তিনি সবুজ ওরফে ‘শুটার সবুজ’ নামেও পরিচিত।

মামলার পর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সোহেল ওরফে শুটার সোহেল (৩৫) ও শেখ মৃদুল ওরফে বাবু ওরফে মির্জা (৩৪) নামে অপর দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তদন্তে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রফিকুল হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী হিসেবে আবদুর রহিম ও আনোয়ার হোসেন পলাশ নামে দুজনের পরিচয় জানতে পারে।

তবে রহিম ও আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয় ডিবি। ওই অবস্থায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে। এতে প্রধান আসামি গ্রেপ্তার ও ঘটনার মূল কারণ উদ্‌ঘাটন না হওয়ায় আদালতে নারাজি আবেদন করেন মামলার বাদী সাঈদ হোসেন। এ কারণে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

এই পর্যায়ে মামলাটির তদন্তভার পরে পিবিআইর ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) পরিদর্শক মো. জুয়েল মিঞার ওপর। তিনি গুপ্তচর ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আনোয়ার হোসেনের অবস্থান শনাক্ত করেন।

পিটিআইর পরিদর্শক মো. জুয়েল মিয়া বলেন, আনোয়ার হোসেন তাঁর সহযোগী শুটার সোহেল, শেখ মৃদুল, আবদুর রহিমের মাধ্যমে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের নাম করে নিউ শাহজালাল আবাসিক হোটেল থেকে নিয়মিত চাঁদা নিতেন। পরে তিনি রফিকুল ইসলামের কাছে ভারতীয় মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিতে চাইলে রফিকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আনোয়ার।

আনোয়ার হোসেন নিজে রফিকুলকে গুলি করেন বলে জানান পিবিআই পরিদর্শক মো. জুয়েল মিয়া। তিনি বলেন, চাঁদা না পেয়ে রফিকুলকে মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকি দিতেন আনোয়ার। পরে আনোয়ার তাঁর সহযোগী শুটার সোহেল, শেখ মৃদুল, রহিমসহ কয়েকজনকে নিয়ে রফিকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এরপরই আসামিরা গুদারাঘাট বটতলায় চলে যায়। সেখানে মোবাইল বন্ধ করে তুরাগ নদে ফেলে আত্মগোপনে যান আনোয়ার।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, রফিকুলের বুকের বাঁ পাশে তিনটি গুলি করা হয়। তাঁর মরদেহের পাশে তিন লাখ ছয় হাজার টাকার একটি ব্যাংক চেকের রক্ত মাখা তিনটি টুকরো পাওয়া গিয়েছিল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.