‘স্মরণকালের’ ভয়াবহ বন্যায় শেরপুরে নিহত ৪, উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনী

0
18
শেরপুরে উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনী

টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের সব পাহাড়ি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, নকলা শ্রীবরদী এবং শেরপুর সদরের অন্তত ৪০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম। আকস্মিক এ বন্যায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পানিবন্দী অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ।

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন মৃত্যুর খবরের সত্যতা স্বীকার করে জানান, ভারী বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন ইদ্রিস আলী, খলিলুর রহমান ও বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের ওমিজা বেগমসহ চারজন। নিখোঁজ রয়েছেন একজন। সেনাবাহিনী, পুলিশ ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে অভিযান চললেও পানির প্রবল স্রোত আর পর্যাপ্ত নৌযানের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ। সেনাবাহিনীর ছয়টি টিম ছয়টি স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টে পানি ১ সেন্টিমিটার এবং নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তীব্র স্রোতে অপর পাহাড়ি নদী চেল্লাখালীর ওয়াটার গেজ উঠে যাওয়ায় এখানকার পরিমাণ জানা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছেন। সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র, মৃগী ও দশানী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে পাহাড়ি নদীগুলোর উজানে নদীর পানি কিছুটা কমলেও থেমে থেমে ভারী বর্ষণের ফলে বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হচ্ছে না। বরং ভাটি এলাকায় পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুক্রবার রাত থেকে প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে ঘরের চালে, সিলিংয়ে ও মাচায়। অনেককে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। শেরপুরের বিভিন্ন বেসরকারি বেশ কয়েকটি সংগঠন এবং জেলা বিএনপির উদ্যোগে দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবারসহ কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। জেলা বিএনপি সভাপতি সাবেক এমপি মাহমুদুল হক রুবেল দুপুরে ঝিনাইগাতি এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।

নালিতাবাড়ীর ভোগাই, চেল্লাখালী নদীর ও ঝিনাইগাতীর মহারশির বিভিন্ন স্থানের বাঁধে ব্যাপক ভাঙন হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া গাজিরখামার সড়ক, শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া তিনআনী সড়ক, নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়কসহ জেলার প্রধান গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১০টি সড়ক। বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়ক। ভেসে গেছে এসব এলাকার সব পুকুরের মাছ। সেইসঙ্গে অনেক পরিবারের গবাদি পশু ভেসে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে উঠতি আমনক্ষেত।

বিভিন্ন স্থানে ঢলের পানিতে ধ্বসে ও ভেসে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি। পানিতে ভাসছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র। এসব এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কিছু আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অনেকে বিপাকে পড়েছেন।

জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত জেলার সাড়ে সাড়ে ৮শ হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। সাড়ে ৯০০ হেক্টর জমির সবজির আবাদ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শেরপুরে বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ মিলিমিটার এবং নালিতাবাড়ীর দুটি পয়েন্টে ১৭০ ও ১০০ মিলিমিটার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.