স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক বুলবুল মহলানবীশ আর নেই। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর আজ শুক্রবার ভোরে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বুলবুল মহলানবীশের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন তাঁর নিকট আত্মীয় অভিনেত্রী জয়ীতা মহলানবীশ।
বুলবুল মহলানবীশ বহুমুখী গুণের অধিকারী ছিলেন। একাধারে কবি ও লেখক, সংগীত, নাট্য ও আবৃত্তিশিল্পী হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছিলেন। তিনি টেলিভিশন-বেতার-মঞ্চে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিবিষয়ক বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতেন। দীর্ঘদিন ধরে নানান রোগে ভুগছিলেন তিনি। তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠান নিয়ে আজ দুপুর পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের আরেক শিল্পী তিমির নন্দী জানিয়েছেন, প্রয়াত শিল্পী বুলবুলের সন্তান আমেরিকায় থাকেন। তাঁর সঙ্গে আলাপ করে সবকিছু চূড়ান্ত হবে। দুই দিন পরও হতে পারে। আপাতত মরদেহ রাখা হয়েছে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালের হিমঘরে।
বুলবুল মহলানবীশের মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের অনেকেই তাঁর চলে যাওয়ায় শোক প্রকাশ করেছেন।
১৯৫৩ সালের ১০ মার্চ বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন কৃতী শিল্পী ও সংগঠক বুলবুল মহলানবীশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স করেছেন। দেশে-বিদেশে শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘদিন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কলকাতার বালিগঞ্জের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয় ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটি। বাঙালির বিজয়ের ঐতিহাসিক ক্ষণে কালজয়ী গানটিতে কণ্ঠ দেওয়া শিল্পীদের অন্যতম বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল মহলানবীশ। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের উজ্জ্বল প্রতিনিধি ছিলেন তিনি, সর্বোপরি দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব।
নজরুলসংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবীশ নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদের সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, রবীন্দ্র একাডেমি। জাতীয় কবিতা পরিষদ, কচিকাঁচার মেলা, উদীচী, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শিল্পী পরিষদসহ বহু সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
বুলবুল মহলানবীশের দুটি গানের অ্যালবাম রয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে ১২টির বেশি গ্রন্থ। ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব প্রস্তুতি ও স্মৃতি ’৭১’ তাঁর বহুল আলোচিত বই। সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য পেয়েছেন চয়ন স্বর্ণপদক, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ফাউন্ডেশন সম্মাননা, পশ্চিমবঙ্গের নজরুল একাডেমি সম্মাননা পদক।