https://www.fapjunk.com https://fapmeister.com
সৌদিতে ২১৫ কোটি টাকা গেছে হুন্ডিতে - Daily Provat Alo
প্রচ্ছদ বাংলাদেশ সৌদিতে ২১৫ কোটি টাকা গেছে হুন্ডিতে

সৌদিতে ২১৫ কোটি টাকা গেছে হুন্ডিতে

0
156

গতকাল রোববার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এর আগে গত ৫ মার্চ এ ঘটনায় সৌদি কর্তৃপক্ষ ঢাকা দূতাবাসের সাবেক দুই কর্মকর্তাসহ আট বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে।

সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে, সৌদি দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা ও বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির কয়েকজন মালিক ২১৫ কোটি টাকার বেশি পাচার করেছেন। পুরো অর্থ নেওয়া হয়েছে হুন্ডির মাধ্যমে। হুন্ডিতে অর্থ পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে গুলশান ও বনানীর দুটি মানি এক্সচেঞ্জের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো ফেডারেল মানি এক্সচেঞ্জ, অন্যটির নাম জানতে পারেনি। গত বছরের অক্টোবর থেকে এ দুটি মানি এক্সচেঞ্জ অর্থ পাচারে জড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া সাতটি রিক্রুটিং এজেন্সিকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৌদি দূতাবাসকেন্দ্রিক যে চক্র সৌদি আরবে ভিসা বাণিজ্যে জড়িত, তাদের সঙ্গে ওই এজেন্সিরগুলোর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। মূল সন্দেহভাজন জসিম উদ্দীন সাইদের সব ব্যাংক হিসাবও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর নামে দেশে ১৯০টির বেশি ব্যাংক হিসাব রয়েছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার বাছির উদ্দিন বলেন, সৌদি ভিসাকেন্দ্রিক ঘটনাটির তদন্ত আমরা শুরু করেছি। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সব নিয়ম মেনেই এটি চলছে।

ঘুষ নিয়ে ভিসা দেওয়ার অভিযোগে গত মার্চে ঢাকার সৌদি দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগের সাবেক প্রধান ও উপরাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ ফালাহ মুদাহি আল-শামারি এবং কনস্যুলার বিভাগের উপপ্রধান খালেদ নাসের আয়েদ আল-কাহতানিকে গ্রেপ্তার করে দেশটির তদারকি ও দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ (নাজাহা)। অভিযোগ উঠেছে, এ দুই কর্মকর্তা বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে ৫ কোটি ৪০ লাখ সৌদি রিয়াল ঘুষ নিয়েছেন, যা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১৫৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, সৌদি দূতাবাসের সাবেক দুই কর্মকর্তাকে বিভিন্ন সময় গুলশানের অভিজাত হোটেল ‘ব্লু বেরি’তে ডেকে নেওয়া হতো। তাঁদের দেওয়া হতো বিভিন্ন উপহার, অনৈতিক কাজে অংশ নেওয়ার ফাঁদ ও গোপনে তা ভিডিও করে অনেক সময় প্রতারণাও করা হতো। দূতাবাসের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ নীতি’ ও ফাঁদে ফেলার কৌশল নেওয়ার ঘটনায় সাতটি রিক্রুটিং এজেন্সিকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হচ্ছে।

সিআইডি সূত্র বলছে, এর মধ্যে একটি এজেন্সি হলো ‘ও সন্স ইন্টারন্যাশনাল’। এর কর্ণধার নিজাম উদ্দিন চৌধুরী। গত মার্চে ওই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি আশরাফ উদ্দিন আকন্দ সৌদিতে গ্রেপ্তার হন। তাঁর গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জে। গ্রেপ্তার অভিযানের সময় সৌদি আরব পুলিশের কাছে আশরাফ একটি পরিচয়পত্র দেখান। সেখানে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান দাবি করেন। সিআইডি বলছে, হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে যারা সৌদিতে অর্থ পাচার করেছে, তাদের মধ্যে আশরাফ অন্যতম। এ তালিকায় আরেকজন হলেন জসিম উদ্দীন সাইদ। তাঁর গ্রামের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা। সাইদের প্রতিষ্ঠানের নাম ইউনাইটেড ম্যানপাওয়ার এজেন্সি। তিনি জোহানা গ্রুপের কর্ণধার। বাংলাদেশে তাঁর রয়েছে ৫০টির বেশি মেডিকেল সেন্টার। সৌদি আরবে সাইদ, আশরাফের বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ তদন্ত করছে নার্সিগাস রিক্রুটিং এজেন্সির কণর্ধার মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন নূর, অধ্যাপক আবুল কালাম মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের বিষয়ে। এ ছাড়া এনাম ও এমসিইউ নামে দুটি রিক্রুটিং এজেন্সিও সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। অর্থ পাচারের পাশাপাশি সাইদ ও আশরাফ স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তদন্তে আরও জানা গেছে, ভিসা বাণিজ্যে সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে একজন ফিলিস্তিনি নাগরিকের সঙ্গে আর্থিক চুক্তি হয় আশরাফের। সেই মিশনে সফল হওয়ার পর প্রতিশ্রুত অর্থ ফিলিস্তিনি নাগরিককে ফেরত দিতে গড়িমসি করেন আশরাফ। এরপর ওই বিদেশি নাগরিক বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে সৌদির এক পুলিশ কর্মকর্তাকে জানিয়ে বাংলাদেশি ওই নাগরিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে ওই ফিলিস্তিনি নাগরিক ৫ মার্চ আশরাফের বাসায় গেলে তিনি জরুরি সেবায় ফোন করে আইনি সহায়তা চান। পরে সৌদি পুলিশের একটি দল ওই বাসায় গিয়ে আশরাফকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া বেআইনিভাবে ফিলিস্তিনি নাগরিককে সহায়তা করার অভিযোগে নিজ দেশের পুলিশ কর্মকর্তাকেও আটক করা হয়। আশরাফকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সৌদি ভিসা নিয়ে বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির খবর ফাঁস করে দেন।

পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, সৌদিতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি ও দেশে থাকা এই চক্রের অবৈধ অর্থের উৎস প্রথমে অনুসন্ধান করা হবে। এরপর সেখানে গ্রেপ্তার আট বাংলাদেশিকে কীভাবে দেশে ফেরত আনা যায়– সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সভাপতি আবুল বাশার বলেন, টাকার মাধ্যমে সৌদির ভিসা দেওয়া শুরু হয়েছিল। সৌদি দূতাবাসের অসাধু সিন্ডিকেটের সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সি এ কাজে সক্রিয় ছিল। বিষয়টি বায়রার পক্ষ থেকে প্রথমে নজরে আনা হয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে তাদের তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে। সৌদিতে কয়েকজন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারও করা হয়। যাদের কারণে গরিব ও অসহায় মানুষকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে সৌদির ভিসা নিতে হয়েছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করা হোক।

বায়রার সভাপতি আরও বলেন, ঢাকায় ‘শাপলা সার্ভিস সেন্টার’ খুলতে চেয়েছিল একটি চক্র। যাদের পরিকল্পনা ছিল, ভিসাপ্রত্যাশীদের সব নথি ওই প্রতিষ্ঠানে জমা দেওয়া হবে। এর বিনিময়ে মোটা অঙ্কের সেবা খরচ (সার্ভিস চার্জ) নেওয়া হবে। আমাদের বাধার মুখে সেটা বন্ধ হয়।

টপ টেন ওভারসিজের মালিক মাহবুব হোসেন বলেন, প্রতি ভিসা বাবদ বাড়তি ২০০-৩০০ ডলার নেওয়া হতো। দেশের ডলার সংকটের মধ্যে যারা সৌদি ভিসাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে বিদেশে পাচার করেছে, তাদের চিহ্নিত করা জরুরি। সৌদি আরবে দেশটির দুই কর্মকর্তা ও বাংলাদেশের কয়েকজন গ্রেপ্তারের পরপরই বাংলাদেশে মামলা হওয়ার দরকার ছিল। কারণ, অপরাধ হয়েছে বাংলাদেশেই। টাকা গেছে বাংলাদেশ থেকে আর জড়িত চক্রের অধিকাংশ সদস্য আমাদের নাগরিক।

পুলিশের উচ্চ পদের এক কর্মকর্তা জানান, সৌদিতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশির বাড়িতে মার্চে তল্লাশি চালিয়ে ২ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার রিয়াল পাওয়া গেছে। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া সোনা ও দামি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে, যা অবৈধ ভিসা বিক্রির টাকায় কেনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ বলছে, সৌদিতে বাংলাদেশিদের কাছে পাওয়া অর্থ পাচার করে নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সৌদি দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের সাতটি রিক্রুটিং এজেন্সিকে জনবল পাঠাতে সুবিধা দেয়। একটি রিক্রুটিং এজেন্সি সপ্তাহে ২০টির বেশি ভিসা আবেদন জমা দিতে পারবে না– সৌদি দূতাবাস হঠাৎ এমন নিয়ম চালু করলে বিপাকে পড়ে রিক্রুটিং এজেন্সি। অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতি সপ্তাহে কয়েকশ পাসপোর্ট নিয়ে কাজ করে। নতুন নিয়মের কারণে ভোগান্তিতে পড়লে দ্রুত ভিসা পাইয়ে দিতে তারা দূতাবাসের সিন্ডিকেটকে টাকা দেওয়া শুরু করে। তবে দূতাবাসের চক্রটি এই টাকা নিত নিজস্ব দালালের মাধ্যমে।

বনানীর ফেডারেল মানি এক্সচেঞ্জের মালিক মামুনুল হক বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান থেকে সৌদিতে হুন্ডিতে অর্থ পাচার হয়েছে– এমন তথ্য জানা নেই। কেন এ ধরনের অভিযোগ উঠছে, বলতে পারব না।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.