সোয়া তিন বছর বেতন পান না ৭৫০ শিক্ষক

0
122

টানা তিন বছর তিন মাস কোনো বেতন-ভাতা পান না দেশের ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৭৫০ শিক্ষক। মূল্যস্ফীতির চাপে ও দুর্মূল্যের বাজারে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তাদের মুখে নেই কোনো হাসি। আছে অনেক অবহেলা ও বঞ্চনার কথা। ক্লাস নিচ্ছেন অভুক্ত পেটে। অথচ বড় আশা করে প্রকৌশল শিক্ষায় দীক্ষা নিয়েছিলেন এসব মানুষ গড়ার কারিগর।

এই শিক্ষকরা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের শেষ হয়ে যাওয়া স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রকল্পের (স্টেপ) শিক্ষক। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুনে শেষ হয়ে যাওয়ার পর সরকার এ শিক্ষকদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে স্থানান্তরে বিলম্ব হওয়ায় এ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রাপ্তিও ঝুলে যায়। প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ার পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লিখিত নির্দেশে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এক বছর বেতনও পেয়েছেন। ২০২০ সালের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত তারা আর কোনো বেতন-ভাতা পাননি। গত ৩৯ মাস শূন্য হাতে প্রতিদিন অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন শিক্ষকরা। এ অবস্থায়ও তারা ক্লাস, পরীক্ষা যথারীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর কর্মরত মোট শিক্ষকের অর্ধেকই তারা। এ কঠিন বাস্তবতা সামনে নিয়ে আজ আবারও এসেছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। তবে এই দিবসের কোনো তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছেন না এই শিক্ষকরা। এবারের প্রতিপাদ্য ‘শিক্ষার জন্য কাঙ্ক্ষিত শিক্ষকের স্বল্পতা ও বৈশ্বিক করণীয়।’ দিবসটি পালন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বর্তমান সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল চালুর ঘোষণা দিয়েছিল। তবে অজ্ঞাত কারণে তা কার্যকর হয়নি। টানা ১৪ বছর ধরে তা কেবল প্রতিশ্রুতিতেই আটকে আছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী সমকালকে বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে শিক্ষার সামগ্রিক বাজেট বাড়াতে হবে। প্রকৃত মেধাবীদের এ পেশায় আনতে উচ্চ বেতন ও পদমর্যাদা বাড়াতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেকারত্ব কাটাতে নিম্নমেধার লোকজনও শিক্ষকতায় ঢুকে পড়েছে। এতে জ্ঞানের চর্চা ও বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পৃথক বেতন স্কেল চালু তো দূরের কথা, অনেক শিক্ষক এখনও ঠিকমতো বেতনই পান না। এমনই উদাহরণ ৪৯ সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৭৫০ শিক্ষক।

বাংলাদেশ পলিটেকনিক টিচার্স ফেডারেশনের (বিপিটিএফ) প্রধান সমন্বয়ক ও যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক টেকিনোলজির জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর বিপুল আহম্মেদ বলেন, কিছুদিন ধারদেনা করে চলছে। বর্তমান বাজারে  আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকেও ধার পাওয়া যাচ্ছে না। দোকানদার আর বাকি দেয় না। পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বৃদ্ধ বাবা-মা এবং সন্তানের ভরণপোষণের আর কোনো উপায় নেই।

জানা গেছে, দেশের ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মোট শিক্ষক রয়েছেন ১ হাজার ৪২৭ জন। তার মধ্যে রাজস্ব খাতে ৬৫০ জন, আর প্রকল্পের ৭৭৭ জন। তাদের মধ্য থেকে বিগত দিনে বেতন-ভাতা না পেয়ে ২৭ জন শিক্ষক চাকরি ছেড়ে বিভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। এখন বাকি শিক্ষকরা ক্লাস নেওয়া বন্ধ করলে সারাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম একযোগে মুখথুবড়ে পড়বে।

এ শিক্ষকের বেতন-ভাতা ছাড়ের কোনো উদ্যোগ আছে কিনা জানতে বারবার মোবাইলে ফোন করা হলেও কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন ফোন রিসিভ করেননি।

দেশের প্রবীণ শিক্ষক নেতা ও জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ সমকালকে বলেন, এই শিক্ষকদের বেতন না দেওয়া সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। কাউকে কাজ করিয়ে তাকে পারিশ্রমিক না দেওয়া চরম অন্যায়। বিনা বেতন বছরের পর বছর কাজ করে যাওয়া এই শিক্ষকদের মর্যাদাও ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.