বঙ্গোপসাগরে গভীরে ডুবে ডুবে ছবি তোলেন শরীফ সারওয়ার। সেসব ছবিতে উঠে আসে জলদুনিয়ার প্রকৃতি আর প্রাণী। সমুদ্র-গবেষকেরা তাঁর ছবিতে খুঁজে পান অজানা অনেক তথ্য। সর্বশেষ গত মার্চে সেন্ট মার্টিনে পানির তলে অভিযান চালিয়েছেন, সেই অভিজ্ঞতা শুনলেন সজীব মিয়া
দিন দিন যত দেখছি, তত মুগ্ধ হচ্ছি। কী বিশাল ভান্ডার বুকে নিয়ে আছে বঙ্গোপসাগর। ছবি তুলতে তুলতে অনেক সময় বিস্ময়ে আনমনা হয়ে যাই। কত চেনা-অচেনা প্রাণী আর উদ্ভিদের দেখা পাই। প্রতিবারই ভিন্ন কোনো অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢাকায় ফিরি।
সর্বশেষ গিয়েছিলাম গত ১৮ মার্চ। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রকল্পের সঙ্গে আলোকচিত্রী হিসেবে যুক্ত হয়েছি। এই কাজে প্রতি মাসেই দিন কয়েকের জন্য যেতে হয়। গত ২৫ মার্চ পর্যন্ত দ্বীপ থেকে সাগরে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ডুব দিয়েছি। গবেষকদের চাহিদা অনুযায়ী যেমন ছবি তুলেছি, তেমনি নিজের শখের ছবিও তুলেছি।
সেন্ট মার্টিনে থাকতেই এবার ভয়াবহ ঝড়ের কবলে পড়েছিলাম। এ সময় সাগর ভয়ানক উত্তাল থাকে। পানির নিচের পরিবেশেও প্রভাব পড়ে। এমনিতেই সরঞ্জামস্বল্পতার জন্য খুব ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়, তার ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে সেই ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়। তবে কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই ঝড়ঝাপটা সামলে নিয়েছি।
সাগরের পরিবেশ দেখে মনে হয়, প্রতিবছর ভয়াবহতা শুধু বাড়ছে। প্লাস্টিক সামগ্রীতে ভরে গেছে সেন্ট মার্টিনের আশপাশের সমুদ্র তলদেশ। দ্বীপ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার খানিক দূরে গিয়েও এবার পটেটো চিপসের প্যাকেট পেলাম। সেই প্যাকেট একটা প্রবালের গায়ে লেপ্টে আছে। পানির নিচের পরিবেশ দূষণ করছে পলিথিন। জাল, বালুকণা প্রবালের ওপর পড়ে থাকছে। আমরা সচেতন না হলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে।
পেশাদার আলোকচিত্রী হিসেবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। রাজপথে রাজনৈতিক হাঙ্গামার ছবি তুলেছি। কিন্তু মনে মনে ভাবতাম, আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফির কথা। ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। বাংলাদেশের মানচিত্রের দিকে তাকালে শিরা-উপশিরার মতো নদী দেখা যায়। বাংলাদেশের সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল সমুদ্রবেষ্টিত। এত বড় একটা অঞ্চল পানির নিচে। সেই অঞ্চলের রহস্য তো আমরা জানি না। পেশাদার আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফার হিসেবে সেই রহস্য জানার চেষ্টা করছি। যার শুরুটাও সেন্ট মার্টিনে। তাই সেন্ট মার্টিন নিয়ে আমার বিশেষ আগ্রহ আর আলাদা মায়া কাজ করে। মনে হয়, এই দ্বীপ আর সমুদ্র আমার আরেক ঠিকানা।