ঝালকাঠি সদরের ছত্রকান্দা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে উল্টে যাওয়া বাসের চালক মোহন হাওলাদারের ভারী যানবাহন চালানোর অনুমতি ছিল না। তিনি ‘বাসার স্মৃতি’ পরিবহনের বাসটির সুপারভাইজার ছিলেন। ২০২০ সালে হালকা যানবাহনের লাইসেন্স নেন। বছরখানেক আগে মালিক জেলা বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আকন তাঁকে চালক নিয়োগ করেন। তবে মোহনকে দিয়ে বাস না চালাতে মালিককে একাধিকবার বলেও কাজ না হওয়ায় ছয় মাস আগে মালিক সমিতিকে লিখিত জানান জেলা শ্রমিক সমিতির নেতারা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), মালিক ও শ্রমিক সমিতি এবং ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত শনিবার ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ ১৭ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হন।
রোববার রাতে চালক, সুপারভাইজার ও হেল্পারকে আসামি করে মামলা করেছেন ঝালকাঠি সদর থানার এসআই সুশংকর মল্লিক। তবে এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এদিন জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির সদস্যরা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন ছাড়াও আহত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নিয়েছেন। আর ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি করে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি।
ঝালকাঠি বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বাসচালক মোহন সমিতির সদস্য না হলেও মালিক তাঁকে দিয়ে গাড়ি চালাতেন। সদস্যদের মধ্যে চালকের স্বল্পতা থাকায় জোর করে কিছু বলা যায়নি। তবে তাঁকে দিয়ে গাড়ি না চালানোর জন্য মালিক আকন ভাইকে একাধিকবার নিষেধ করেছি। তিনি না শোনায় আমি মালিক সমিতিতে ছয় মাস আগে লিখিত অভিযোগ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মোহন একই বাসের সুপারভাইজার ছিলেন। মালিক সেই মায়ায় পড়ে তাঁকে চালকের চাকরি দেন।’
ঝালকাঠি বিআরটিএ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের মডেলের বাসটির (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪৬৫৪৯) ফিটনেসের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। ট্যাক্স টোকেন একই বছরের ৯ মে এবং রুট পারমিটের মেয়াদ রয়েছে ২০২৫ সালের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে বাসটি খুলনা-বরগুনা পথে অনুমতি থাকলেও চলাচল করছিল ভাণ্ডারিয়া-বরিশালে। বিআরটিএ ঝালকাঠি-পিরোজপুর জোনের সহকারী পরিচালক ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির সদস্য মাহাবুবুর রহমান জানান, চালক মোহনের নামে ২০২০ সালে বরিশাল থেকে হালকা মোটরযান চালানোর লাইসেন্স ইস্যু করা। এটি প্রাথমিক ড্রাইভিং লাইসেন্স। তিন বছর পরে তিনি ভারী যান চালানোর লাইসেন্স পেতেন। পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, হতাহতদের পরিবার কোনো অভিযোগ না করায় বাসচালকসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ।