সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ বুধবার সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়; শেষ হয় বিকেল চারটায়। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা আছেন, তাঁদের ভোট নেওয়া হবে।
দুই সিটিতেই দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোট গ্রহণ হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। তবে ভোটার উপস্থিতি তেমন বেশি ছিল না। সিলেটে পাঁচ ঘণ্টা পর ভোট পড়েছে ২০ শতাংশ। রাজশাহীতে কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে প্রতিনিধিরা দেখেছেন, সেখানে ২৬ থেকে ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে।
দুই সিটিতেই আজ ভোট গ্রহণ হয়েছে ইভিএমে। কিছু কিছু কেন্দ্রে ছিল যান্ত্রিক ত্রুটি। এতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়েছে ভোট দিতে। তা নিয়ে কোনো কোনো ভোটার ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।
রাজশাহীর দুই ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে দুপুরে নগরের ভেড়িপাড়ার মোড়ে একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে পাঁচ মিনিটের জন্য রণক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। দুই প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পের চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। অবশ্য অল্পক্ষণের মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তারপর প্রায় এক ঘণ্টা পর্যন্ত এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। ভোটাররা ভয়ে পালিয়ে যান।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন নিজের ভোট দেন নগরের স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল কেন্দ্রে। দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ভোট দেন তিনি। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি ভুল করেছে।
ভোটার কম থাকা প্রসঙ্গে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘একেক এলাকার মানুষের অভ্যাস একেক রকম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানেও ভোটার বাড়বে।’ নির্বাচনে অন্তত ৬০ শতাংশ ভোট পড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ভোট দেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পাঠানটুলা শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে। ভোট দেওয়ার পর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি জয়ের ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী।’ তিনি নগরবাসীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসার এবং নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
তবে সিলেট সিটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল অভিযোগ করেন, সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার মতো পরিবেশ নেই। আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে নগরীর আনন্দ নিকেতন ভোটকেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আপনাদের মাধ্যমে নগরবাসীকে জানাতে চাই, আমি আনন্দ নিকেতনে ভোট দিতে এলাম। ভোট দিতে এসে দেখলাম, এখানে পেশিশক্তির জোর দেখানো হচ্ছে।’
আজ সিলেট সিটির ভোটে অনেক কেন্দ্রেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট পাওয়া যায়নি। সরেজমিন বেলা ১১টার দিকে দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, মোট নয়টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলছে। সব কটি কেন্দ্র নৌকার প্রার্থীর এজেন্টরা রয়েছেন; তবে লাঙ্গলের প্রার্থীর এজেন্ট রয়েছেন মাত্র একজন।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মো. নজরুল ইসলাম বাবুল আর স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন ছাড়া বাকি পাঁচ মেয়রপ্রার্থী ভোট নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, বেলা দুইটা পর্যন্ত সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। ভোট নিয়ে তাঁদের কোনো অভিযোগ নেই।
সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্র অনুযায়ী, নগরের ৪২টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এখানে মেয়র পদে ৮ জন এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর পদে ৩৬০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৯০টি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৩৬৪টি। এর মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সিলেট সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির মো. নজরুল ইসলাম, জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল হানিফ, মো. ছালাহ উদ্দিন, মো. শাহ্ জামান মিয়া ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা। আর বরিশাল সিটি নির্বাচনের দিন দলের মেয়রপ্রার্থীর ওপর হামলার পর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান সিলেটের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আয়তন ৯৬ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২। এর মধ্যে নতুন ভোটারসংখ্যা ৩০ হাজার ১৫৭। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন। হিজড়া ভোটার ৬ জন।
এই সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ও জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ আনোয়ার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।