সিলেটে সাদাপাথর লুট, যা উঠে এসেছে জেলা প্রশাসন ও দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে

0
18
সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর। ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর থেকে ৮০ শতাংশ পাথর লুটপাটের খবর প্রকাশিত হলে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় পৃথকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিলেট জেলা প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ৫১ জন ব্যক্তি ও সংস্থার জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশ
জেলা প্রশাসনের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি সাত পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দিয়ে ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করেছে। বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পদ্মাসন সিংহ প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করেন। বদলির আদেশ পাওয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘প্রতিবেদনটি এখনও পড়ে দেখা হয়নি। আজই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কমিটিকে তিনটি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল—ঘটনাস্থল পরিদর্শন, দায়-দায়িত্ব নিরূপণ এবং সুপারিশ পেশ। পুলিশ ও প্রশাসনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১০টি সুপারিশ করে তারা। যদিও বিজিবির কাছ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পায়নি তদন্ত কমিটি, এমনকি চিঠির জবাবও মেলেনি।

সুপারিশসমূহ—

উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন;
সাদাপাথরে বিএমডির স্থায়ী অফিস স্থাপন;
টাস্কফোর্সের অভিযান ও চেকপোস্ট বাড়ানো;
গাছপালা রোপণ ও সবুজায়ন কার্যক্রম বৃদ্ধি;
প্রত্যেক সংস্থাকে নিজ নিজ দায় নির্ধারণে নিজস্ব তদন্ত পরিচালনা।

এ ঘটনার পর ১২ আগস্ট জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। একইসঙ্গে রেলওয়ে বাংকার এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে পরিবেশ ও পর্যটন স্থানের সৌন্দর্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মঙ্গলবার গঠিত ওই কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীনকে আহ্বায়ক এবং সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) দেবজিৎ সিংহকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন
দুদকের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, পর্যটন এলাকায় প্রশাসনের উপস্থিতি ও বিজিবির টহল থাকা সত্ত্বেও কয়েক মাস ধরে কয়েকশ কোটি টাকা মূল্যের পাথর লুট করা হয়েছে। প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যা স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ইন্ধন ও সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। পাথর আত্মসাতের প্রক্রিয়াটি সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তা ও যোগসাজশে সংঘটিত হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাজনৈতিক নেতাদের নাম
প্রতিবেদনে বিএনপির ২০ নেতার নাম উল্লেখ রয়েছে। এর প্রতিবাদে সিলেট মহানগর বিএনপি বুধবার সংবাদ সম্মেলনে জানায়, তারা এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছে। দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী কোনোভাবেই জড়িত নন বলে দাবি করেন নেতারা।

জামায়াত ইসলামী সিলেট মহানগরের আমির মো. ফখরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীনের নামও প্রতিবেদনটিতে রয়েছে। জেলা ও মহানগর জামায়াত এক বিবৃতিতে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

দুদকের সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফি মো. নাজমুস সা’দাৎ বলেন, প্রাথমিক প্রমাণের ভিত্তিতে অনুসন্ধান নথি খোলার জন্য অনুমতি চেয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। অনুমতি পেলে আলাদাভাবে প্রত্যেকের বিষয়ে তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.