সিনেমা বানাতে গিয়ে সমিতির সদস্য হতে হবে কেন: অতিরিক্ত সচিব

0
201
ফিল্ম অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ (ফ্যাব) আয়োজিত ‘ফ্যাব ফেস্ট’
‘ফ্যাব ফেস্ট’-এ কথা বলছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র) মো. জাহাঙ্গীর আলম

‘ফ্যাব ফেস্ট’-এ কথা বলছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র) মো. জাহাঙ্গীর আলম

বাংলা একাডেমিতে দিনব্যাপী শুরু হওয়া ফ্যাব ফেস্টে মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর শুরু হওয়া ‘হাউ “পরাণ” অ্যান্ড “হাওয়া” ব্রট ডাউন দ্য হাউস’ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন জাহাঙ্গীর আলম। আলোচনার একপর্যায়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে নতুন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজকদের সমিতির সদস্যপদ প্রাপ্তি, বড় অঙ্কের চাঁদা ও এফডিসির ভোগান্তি প্রসঙ্গের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এফডিসি থেকে যে সনদ নিতে হয়, এই সনদের জন্য এফডিসিকে ১৫ হাজার টাকা নিবন্ধন ফি দিতে হয়। আমরা ধারণা, ১৫ হাজার টাকা নিবন্ধন ফি দেওয়ার ক্ষেত্রে কারও তেমন কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। বিষয়টা হচ্ছে, এটি কেন করা হয়েছিল? এটি আসলে করা হয়েছিল একটি প্রেক্ষাপট থেকে। একটা সময় ছিল যখন এফডিসি ফিল্ম আমদানি করত, তখন এফডিসির এসব ফিল্ম চলচ্চিত্র নির্মাতারা নিয়ে বকেয়াতে সিনেমা বানাত। সিনেমা বানানোর পর সেই টাকা পরিশোধ করত না। আমি যত দূর জানি, ১০০ থেকে দেড় শ কোটি টাকা এখন পর্যন্ত সেই সময়ের ফিল্ম মেকাররা এফডিসিকে পরিশোধ করেনি। আপনারা জানেন, এফডিসি একটি করপোরেশন, নিজের আয় দিয়ে চলতে হয়। বেতন–ভাতা চালাতে হয়। একটি দেশের প্রধান প্রতিষ্ঠান ফিল্ম মেকিংয়ের ক্ষেত্রে হচ্ছে এফডিসি। ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও একই অবস্থা। আমাদেরটা ঠিকমতো চলছে না; কারণ, আমাদের এখানে আগে যে ভিত্তিতে সিনেমা বানানো হতো, তার থেকে উত্তরণ ঘটানো বা আধুনিকায়ন করা দরকার, সেটি সময়মতো করতে পারিনি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে চলচ্চিত্র নির্মাতারা। চলচ্চিত্র নির্মাতারা তখন যদি লসের মধ্যে ফেলে না দিত সরকারকে, তাহলে এফিডিসির অবস্থা আজকে এ রকম দেখতেন না। এফডিসিকে অনেক উজ্জ্বল একটি প্রতিষ্ঠানই দেখতেন সবাই।’

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী

জাহাঙ্গীর আলম এ–ও বললেন, ‘চলচ্চিত্র নির্মাণের পর এফডিসি যেটা করে, কারও কাছে বকেয়া আছে কি না, কেউ বেনামে ফিল্ম বানাচ্ছে কি না, এসব যাচাই করতে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি এবং পরিচালক সমিতির কাছ থেকে একটা প্রত্যয়নপত্র নেয়। প্রযোজক ও পরিচালক সমিতি আবার একটা বাধ্যবাধকতা করে রেখেছে তাদের আইনে, চলচ্চিত্র বানাতে গেলে এবং এফডিসি থেকে সার্টিফিকেট নিতে গেলে প্রযোজক ও পরিচালক সমিতির সদস্য হতে হবে। আর প্রযোজক সমিতির সদস্য হতে গেলে নাকি ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা ও পরিচালক সমিতির ৫৫ হাজার টাকা তাদের মিনিমাম দিতে হয়। এটাকে মনে করি না যৌক্তিক দাবি। আমি ফিল্ম বানাব, আমি প্রযোজক ও পরিচালক সমিতির সদস্য হব কি হব না, এটা আমার ইচ্ছা। কোনো সমিতির সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে বাধ্য করা যায় না, কোনো সমিতির আইনেও এটা পড়ে না। এই নিয়ম সংশোধন করা সম্ভব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। এই সমস্যা দূর হলে প্রযোজক-পরিচালকদের ভোগান্তি আর হয়রানি হবে না।’

এফডিসির সনদপ্রাপ্তি ও ১৫ হাজার টাকা ফি প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম জানালেন, এটি নিয়ে তাঁর সঙ্গে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কথা হয়েছে। বললেন, ‘এফডিসির এমডির সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন, আমি মাত্র এক দিনেই সার্টিফিকেট দিতে পারি, এটার জন্য ১৫ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি নিই। সেটাও যদি সরকার মনে করে নেবে না, তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তা ছাড়া ১৫ হাজার টাকা এফডিসির এমন কোনো আয়ও নয়।’

কথায় কথায় জাহাঙ্গীর আলম বললেন, ‘তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী দেশের চলচ্চিত্র উন্নয়নের ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক। তিনি চলচ্চিত্রের এসব সমস্যা দূর করার ব্যাপারে সচেষ্ট আছেন এবং সব সময় আমাদের দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছেন।’

দিনব্যাপী শুরু হওয়া ফ্যাব ফেস্টে ‘হাউ “পরাণ” অ্যান্ড “হাওয়া” ব্রট ডাউন দ্য হাউস’ শীর্ষক আলোচনায় আরও অংশ নেন প্রযোজক এশা ইউসুফ, শিমুল চন্দ্র বিশ্বাস, পরিচালক রায়হান রাফি। এই আলোচনায় সঞ্চালক ছিলেন পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.