সারা তো চলেই গেল, সাফার কী হবে?

0
1138
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার শিশু সারা মারা যায়।

বড় সন্তান চার বছরের সারার মরদেহ নিয়ে বাবা একাই গেলেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন শেষে তড়িঘড়ি করে রওনা দিলেন ঢাকার দিকে। ঢাকার একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আরেক সন্তান মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। বড় সন্তানের শেষ বিদায়ে মা উপস্থিত থাকতে পারেননি। এক বছরের ছোট সন্তানের দেখভালে তিনি ঢাকায় রয়ে গেছেন।

মাত্র কয়েক দিনে এই মমিনুল-সালমা দম্পতির জীবনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। বড় সন্তান সারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ছোট সন্তান সাফারও ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। অবস্থা গুরুতর।

সারা গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার মগবাজারে রাশমনো স্পেশালাইজড হাসপাতালে মারা যায়। আজ শুক্রবার সকালে তাকে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার কাচিয়ারা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সারার বাবার নাম মো. মমিনুল ইসলাম। তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী। পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকার সোবহানবাগে। সারা সোবহানবাগের স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে প্লে শ্রেণিতে পড়ত।

কথা বলার জন্য শিশুটির বাবার মুঠোফোনে কল করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ভায়রা মতলব দক্ষিণ উপজেলার দীঘলদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান জানান, মমিনুল তাঁর স্ত্রীর ছোট বোন সালমার স্বামী। মমিনুল মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে আছেন যে কারও সঙ্গে কথা বলার পর্যায়ে নেই।

মিজানুর রহমান জানান, ৩ আগস্ট সারা জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরিবারের লোকজন ওই দিন তাকে ধানমন্ডিতে ইবনে সিনা হাসপাতালে নেন। সেখানে রক্ত পরীক্ষার পর তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। হাসপাতালে বেড খালি না থাকায় সারাকে নিয়ে তাঁরা ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানেও বেড না পেয়ে পরে নর্দান হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে মগবাজারে রাশমনো স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কাল রাত সাড়ে নয়টায় হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সে মারা যায়।

মিজানুর রহমান বলেন, সারার ছোট বোন এক বছর বয়সী সাফাও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। গত বুধবার তাকে ধানমন্ডির রেনেসাঁ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালটির চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সাফা আক্তারের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার ফুসফুসে পানি জমে গেছে।

কাচিয়ারা গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, আজ সকালে সারার লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে আত্মীয়স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। দুই সন্তানের একজন নেই। ডেঙ্গু এক মেয়েকে কেড়ে নিল, আরেক মেয়ে এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। বাবা মমিনুল শোকে পাথর হয়ে গেছেন। কারও সঙ্গে তিনি কথা বলছিলেন না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.