বিদেশি কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের মত সামান্য বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে দূতাবাসগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে একথা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন।
কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে আসবে কি না– জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, কূটনীতিকদের সরকার যে নিরাপত্তা দিত, তা বহাল রয়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য বাড়তি যে এসকর্ট ছিল, শুধুমাত্র সেটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। সরকার এও বলেছে– এ সেবা চাইলে দূতাবাসগুলো অর্থের বিনিময়ে আনসার ব্যাটালিয়ন থেকে নিতে পারবে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সরকারে এ সিদ্ধান্ত কোনো সমস্যা হবে না জানিয়ে সেহেলী সাবরীন বলেন, একটি বিষয়ের ওপর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নির্ভর করে না। অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, প্রবাসীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় থাকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে। সামান্য বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না।
কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা কয়টি দেশকে, কবে থেকে এবং কী কারণে দেওয়া হতো– জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে এ মুহূর্তে তথ্য নেই, জেনে জানানো হবে। আর বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান সকল দূতাবাসকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে আমরা জানাবো। বাকি অগ্রগতি পরবর্তী সময়ে জানানো হবে।
এখন পর্যন্ত কোনো দেশ বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছে কি না– জানতে চাইলে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দূতাবাসগুলোকে জানালে, তখন তারা তাদের চাহিদা মতো নিরাপত্তা চাইবে। তখন আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।
বিদেশি কূটনীতিকদের আনসার বাহিনী কীভাবে নিরাপত্তা দেবে, সেটি চূড়ান্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বা আগামী রোববারের মধ্যে নোট ভার্বাল বা কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে দূতাবাসগুলোকে বিষয়টি জানানোর কথা গত বুধবার বলেছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের হালনাগাদ নিয়ে সেহেলী সাবরীন বলেন, গত ৫ মে রোহিঙ্গাসহ একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের মংডু সফর করেন। সরেজমিন রাখাইন সফর শেষে ফিরে এসে রোহিঙ্গারা যে সকল অস্পষ্ট বিষয় উল্লেখ করেছেন তা ইতোমধ্যে মিয়ানমারকে জানানো হয়েছে। প্রত্যাবাসনের জন্য নির্বাচিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল মে মাসে বা তার নিকটবর্তী সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করবে বলে আশা করা যায়।
রোহিঙ্গাদের কোন বিষয়টি বাংলাদেশের কাছে অস্পষ্ট– জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দাবি আমাদের কাছে অস্পষ্ট নয়। রোহিঙ্গারা যখন রাখাইনে গিয়েছিলেন, তাদের কিছু পর্যবেক্ষণ ছিল, সেগুলো বাংলাদেশকে জানালে সরকার মিয়ানমারকে জানিয়েছে।
মুখপাত্র বলেন, মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের মে মাসে বাংলাদেশ সফরের কথা ছিল। তবে ঘূর্ণিঝড় মোকার কারণে তা পিছিয়ে গেছে। মোকার কারণে রাখাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাজেই এ পরিস্থিতিতে সফরটি পরবর্তী সময়ে হবে। এখনও তারিখ নির্ধারিত হয়নি।
তিনি এ সময় জানান, আগামী ২০-২২ মে ঢাকা সফর করবেন মার্কিন ইউনাইটেড স্টেট ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর) এর দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিসটেন্ট সেক্রটারি ব্রেনডেন লিঞ্চ।
সুদানের হালনাগাদ নিয়ে সেহেলী সাবরীন বলেন, এখন পর্যন্ত ৭২১ জন বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককেই ৫০০০ টাকা এবং খাদ্য সামগ্রী উপহার দেয়া হয়েছে। আরো ১৬০ জন বাংলাদেশি দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য আবেদন করেছেন। তাদেরকে প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সুদানে অবস্থানরত বাকি বাংলাদেশিদের বদর এয়ারলাইন্সে সরকারি খরচে সুদান থেকে জেদ্দা পরিবহন করা হচ্ছে। জেদ্দা পৌঁছামাত্র তাদেরকে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের ফ্লাইটে ফেরত পাঠানোর জন্য জেদ্দা কনস্যুলেট কাজ করছে।