লালমনিরহাটে কর্মরত পাঁচ সাংবাদিককে নিজ কার্যালয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ-আল-নোমান সরকারকে বদলি করা হয়েছে। তাঁকে ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলায় এসি ল্যান্ড হিসেবে যোগদান করতে বলা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান এ আদেশ দেন। বিষয়টি আজ শুক্রবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি এম এ মমিন।
বিভাগীয় কমিশনারের স্বাক্ষর করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) বর্তমান কর্মস্থল থেকে ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) বদলি/পদায়ন করা হলো। জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
লালমনিরহাটের আন্দোলনরত সাংবাদিকদের কয়েকজন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে আবদুল্লাহ-আল-নোমান তাঁর কার্যালয়ে পাঁচ সাংবাদিককে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন। পাঁচ সাংবাদিক জমির নাম খারিজসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে এসি ল্যান্ডের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। তথ্য না দিয়ে আবদুল্লাহ–আল–নোমান ও তাঁর সহকারীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
এসি ল্যান্ডের কার্যালয়ে ঘণ্টা খানেক সময় আটক থাকার পর বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে সাংবাদিকদের উদ্ধার করেন লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি এম এ মমিন। এ ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করেন। এরপর লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বেলা দুইটার দিকে সেখানে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের শান্ত করেন এবং এসি ল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি মাহফুজ সাজু বলেন, ‘এসি ল্যান্ড ছাড়াই অফিস সহকারীরা ভূমিসংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি করছিলেন। আমি এ ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করছিলাম। বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রথমে আমাকে এবং পরে সেখানে উপস্থিত হওয়া অপর চার সাংবাদিককে আটক করা হয়। এ সময় আমাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এসি ল্যান্ড। প্রত্যাহার বা তাৎক্ষণিক বদলি করা কোনো শাস্তি নয়। অভিযুক্ত এসি ল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে তাঁকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
লালমনিরহাট প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এটিএন বাংলা ও দৈনিক সমকাল পত্রিকার লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এসিল্যান্ড প্রত্যাহার হওয়ায় আমাদের আংশিক দাবি পূরণ হয়েছে। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তপূর্বক শাস্তির দাবি করছি।’
এদিকে মো. আবদুল্লাহ–আল–নোমান সরকারের লালমনিরহাট সদর উপজেলা থেকে বদলির বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এর পক্ষে ও বিপক্ষে অনেকে মন্তব্য করছেন।
বিষয়টি নিয়ে ওই এসি ল্যান্ড নিজে থেকেই এই প্রতিবেদকের মুঠোফোনে একটি খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন। সেখানে লিখেছেন, ‘আমার পুরো কার্যালয় সিসিটিভির আওতাধীন এবং আমার কাছে ভিডিও রেকর্ড আছে। দেখা যাক কী হয়!’
এ বিষয়ে এসি ল্যান্ডের কার্যালয়ের আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হওয়া পাঁচ সাংবাদিক জানান, তাঁদের কাছে–সহ আরও সাংবাদিকের কাছে বৃহস্পতিবারের ঘটনার স্থির ও ভিডিও চিত্র রয়েছে, যা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে।