বাফুফের সাফল্যগুলো যদি সব কর্মকর্তারা ভাগ নিতে পারেন, তাহলে দায়গুলো কেন নেবেন না। সোহাগের আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্য কি পদত্যাগ করবেন? জিজ্ঞাসা ছিল বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কাছে। উত্তরটা দেন ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মুর্শেদী। জানিয়ে দেন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের এখান থেকে চলে যাওয়া বা নিষিদ্ধ করার সুযোগ নেই। তবে স্বেচ্ছায় কেউ চলে যেতে চাইলে ভিন্ন কথা।
আপাতত পদত্যাগ কেউ করছেন না। কেলেঙ্কারির সব দায় তাঁরা চাপিয়েছেন আবু নাঈম সোহাগের ওপরই। আদর, আশকারার সঙ্গে সোহাগও ছিল অফুরন্ত। দু’দিন আগেও তাঁর হয়ে কথা বলেছেন। সেই কাজী সালাউদ্দিন গতকাল সোহাগকেই ‘নন্দ ঘোষ’ বানিয়ে দায়মুক্তি নেওয়ার চেষ্টা করলেন। ‘আমার অফিসার ভুল করেছেন, বিষয়টিকে আমি এভাবে দেখছি এবং নিচ্ছি। আমি তো ক্লার্ক হিসেবে এগুলো দেখতে পারব না। তো এটা তাঁর দায়।’
ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান মুর্শেদীও সোহাগের ওপর সব দোষ চাপিয়ে দিলেন। ‘আমরা কোনো দায় নেব না। কারণ, এটা বাফুফের ফাইন্যান্স কমিটির বিরুদ্বে কোনো অভিযোগ না। এটা তাঁর (সোহাগ) ব্যক্তিগত।’
বাফুফে প্রায় এক যুগ ধরে চলা সোহাগ অধ্যায় এভাবেই চাপা দিলেও প্রশ্ন থেকে যায়, সব দায় কি কেবলই সোহাগের। ২০১৬-১৭ থেকে আর্থিক অনিয়ম পাওয়ায় বাফুফের বিরুদ্বে তদন্ত করে আসছে ফিফা। কয়েকবার সতর্ক করাও হয়েছিল। শীর্ষ কর্তাদের অজান্তে তিনি কীভাবে দিনের পর দিন ফিফার বিল, ভাউচার, টেন্ডারে অনিয়ম আর গরমিল করেছেন?
গতকাল বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি বৈঠক শেষে প্রায় ২০ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে অনেক প্রশ্নের মধ্যে সেই উত্তরটাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সভায় সবাই একজোট হয়ে সোহাগের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি ঘোষণা করার দাবি তোলেন। তাতে সায় দিয়ে ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন সালাউদ্দিন। ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবেন তাঁরা। সেই রিপোর্টে যদি সোহাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে ফৌজদারি মামলা করার কথাও বলেন মুর্শেদী। বাফুফের দরজা যে সোহাগের জন্য চিরতরে বন্ধ, সেটাও জানিয়েছেন। ‘পরবর্তী সময়ে ফেডারেশনে ও (আবু নাঈম সোহাগ) যেন কাজ করতে না পারে এবং অংশ নিতে না পারে, আমাদের কমিটির সভা থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। আমি আপনাদের এটুকু বলতে পারি, সে আর বাফুফেতে ঢুকতে পারবে না।’
এমনিতেই সোহাগের প্রতি নাখোশ নির্বাহী কমিটির বেশিরভাগ সদস্য। বাফুফে সভাপতির জন্য তাঁকে কিছু বলতে না পারলেও গতকাল সুযোগ পেয়ে তাঁরা সোহাগকে তুলাধুনা করেন। সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ এমপি, ইমরুল হাসান, আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক জুমে অংশ নিয়েছেন মিটিংয়ে। সালাউদ্দিন এখন নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, ‘আপনাদের যেমন পছন্দ হয়নি আমাদেরও হয়নি। আমি নিশ্চিত করতে চাই, এ ব্যাপারটা যেন ভবিষ্যতে আর না হয়। আমার অফিসার ভুল করেছে, বিষয়টিকে আমি এভাবে দেখছি এবং নিচ্ছি। আমি তো ক্লার্ক হিসেবে এগুলো দেখতে পারব না। এটা সাধারণ বিষয়, ফিফা তাঁকে নিষিদ্ধ করেছে ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে। তো এটা তাঁর দায়।’
কিন্তু সভাপতির নির্দেশ ছাড়া কি এমন অনিয়ম করতে পারেন সোহাগ? এমন প্রশ্নের উত্তরে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আপনাকে অভিযোগ করতে হলে কোনো কারণ তো থাকতে হবে। কী হবে সেটা সময় বলে দেবে।’