সবকিছু করেও মাঠের সেরা সাকিব

0
175
৪৫ বলে ৮১ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের পথে সাকিব আল হাসানের দৃষ্টিনন্দন শট - মো. রাশেদ

জাতীয় দলের সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে টি২০ বিশ্বকাপ চলাকালে সিডনিতে সমকালকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সাকিবের মতো ক্রিকেটার শতাব্দীতে এক-দু’জনই আসে। তিনি আরও বলেছিলেন, বাংলাদেশ ভবিষ্যতে অনেক বড় ক্রিকেটার তৈরি করতে পারলেও একজন সাকিব পাবে না। বাঁহাতি এ ক্রিকেটারের মেধা ও প্রজ্ঞা নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন চন্ডিকা। তিনি যে বিন্দুমাত্র বাড়িয়ে বলেননি, তা প্রতিনিয়তই প্রমাণ করে চলেছেন সাকিব নিজে। আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটে বাঁহাতি এ অলরাউন্ডারের উপস্থিতি রোমাঞ্চ ছড়ানো। পরিবার সামলানো থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপনী কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য- সব সামলে ক্রিকেট মাঠেও উজাড় করে দেন নিজেকে। কোনো কিছুই যে প্রভাব ফেলতে পারে না তাঁর পারফরম্যান্সে।

ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজ শেষ করে একটু বিশ্রামের ফুরসত পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্ত্রী এবং সন্তানরা দেশে ফেরায়। মাগুরায় পারিবারিক পিকনিক উদযাপন করে ঢাকা ফিরেই ব্যস্ততা। বিজ্ঞাপনী কাজের পাশাপাশি বিপিএলের দল ফরচুন বরিশালকে নিয়ে পরিকল্পনা করতে হয়েছে তাঁকে। কারণ তিনিই তো দলের প্রাণ। তাঁকে ঘিরেই তো থাকে সব আয়োজন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কর্মব্যস্ত দিন পার করেও ক্লান্তিহীন সাকিব। এই ৩৬ বছর বয়সেও শরীর-মনে তারুণ্যের ছোঁয়া। মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে কোনো জড়তা থাকে না তাঁর।

বিপিএল শুরুর আগে থেকেই বিজ্ঞাপনী কাজের ব্যস্ততা। টুর্নামেন্ট ম্যাচের ফাঁকে ফাঁকে এনডোরসমেন্টের ছোট ছোট কাজ কোনো কিছুই থেমে থাকছে না। ক্রিকেট মাঠের সতীর্থদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়াও থেমে নেই। মাঠে কাছের মানুষের সঙ্গে খুনসুটিও চলে। সবকিছুর পর তিনি একজন পারফরমার ক্রিকেটার। এই বিপিএলে ফরচুন বরিশাল চারটি ম্যাচ খেলে তিনটিতে জিতেছে। যেখানে বাঁহাতি এ অলরাউন্ডারের পারফরম্যান্স অনস্বীকার্য। গতকাল চট্টগ্রামে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ৮১ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেছেন। ৪৫ বলের মোকাবিলায় ৮টি চার ও ৪টি ছক্কা মেরে ইনিংসটি সাজান তিনি। একটি উইকেটও নিয়েছেন তিনি। অলরাউন্ড নৈপুণ্য দিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কারও জেতেন তিনি। নিজেদের প্রথম ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে হারলেও ৩২ বলে ৬৫ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন ২০৯.৩৭ স্ট্রাইকরেটে।

সাকিবের সমসাময়িক অনেক ক্রিকেটারই বিপিএলে খেলছেন। সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে দেশের ক্রিকেটে পঞ্চপান্ডবের যে জাগরণ তৈরি হয়েছিল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সে আকাশ থেকে প্রথম নক্ষত্রের পতন হয় মাশরাফিকে দিয়ে। বাকি চারজন এখনও জাতীয় দলে কোনো না কোনো ফরম্যাট খেলেন। সাকিব শুধু ব্যতিক্রম, যিনি কিনা তিন সংস্করণেই ধারাবাহিক খেলে যাচ্ছেন। টেস্ট এবং টি২০ দলের নেতৃত্বে ফিরেছেন।

সেখানে টি২০ ছেড়ে দিয়েছেন তামিম ও মুশফিক। টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া মাহমুদউল্লাহ টি২০ দল থেকে বাদ পড়েছেন। বিপিএলে খেলছেন এ তিনজনই। অথচ মাঠের পারফরম্যান্সে সাকিবের ধারেকাছে নেই তাঁদের কেউই। কেবল মুশফিক ছোট ছোট কার্যকর দুটি ইনিংস খেলেছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে। কিন্তু তামিম বা মাহমুদউল্লাহ ব্যাট সেভাবে হাসছেই না। সে কারণে মাহমুদউল্লাহ নির্দি্বধায় বলে দেন- সাকিবের ক্রিকেট মেধা অন্য লেভেলের।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.