‘এমপি মিজানুর’ পরিচয়ে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণার অভিযোগে দুই সহযোগীসহ এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলাকালে প্রতারক চক্রের তিনজনকে আটক করেন সংসদের নিরাপত্তাকর্মীরা। তারা রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের হাতে তিন দিনের রিমান্ডে আছে।
ইউরোপের দেশ কসোভো পাঠানোর কথা বলে অন্তত ৪০ জনের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্র। ভুয়া এমপি শামীমুর রহমান ওরফে আতিক ওরফে এমপি মিজানুরের এই কাজে সহযোগিতা করেছেন সংসদ সচিবালয়ের মাস্টাররোলে নিয়োগ পাওয়া কম্পিউটার অপারেটর রাহুল হোসেন। তাঁর মাধ্যমে সংসদে প্রবেশের পাস সংগ্রহ করে কথিত এমপি সংসদে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। পাশাপাশি বিদেশ যেতে ইচ্ছুক অসংখ্য মানুষকে সংসদের গেট পাস দিয়ে ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে।
প্রতারণার শিকার বরগুনার মেহেদী হাসান, নাটোরের নাহিদুল ইসলাম ও হবিগঞ্জের আমিনুল হক বাদী হয়ে শামীমুর রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর আনোয়ার হোসেন খান বুধবার রাতে সমকালকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার আসামিদের তিন দিনের রিমান্ড শেষ হবে। এমপি পরিচয় দেওয়া এবং প্রতারণা করে ১৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত চলছে।
মামলার বাদী মেহেদী হাসান জানান, শামীমুর রহমান ওরফে মিজানুরের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার জগৎপুরে। ঢাকায় তিনি মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটিতে বাস করেন। প্রতারণায় তিনি স্ত্রী মৌটুসি রহমানকেও জড়িত করেছেন। মিজানুরের অন্যতম সহযোগী হিসেবে ছিলেন সংসদ সচিবালয়ের মাস্টাররোলে নিয়োগ পাওয়া কম্পিউটার অপারেটর রাহুল হোসেন। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইনের কমালপুরে। ঢাকায় তিনি মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ হাউজিংয়ে বাস করেন।
মেহেদী হাসানের অভিযোগ, শামীমুর রহমান নিজেকে এমপি মিজানুর হিসেবে পরিচয় দিয়ে সরকারিভাবে চাকরি দিয়ে কসোভো পাঠাবেন বলে সংসদ ভবনের কম্পিউটার অপারেটর রাহুলের মাধ্যমে পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবের কম্পিউটার কক্ষে নিয়ে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন। মিজানুর বিভিন্ন সময় মেডিকেল ফি বাবদ ৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকা নেন। সর্বশেষ ২৯ ফেব্রুয়ারি সংসদ ভবনের ভেতরে পার্লামেন্ট ক্লাবের নিচতলায় ৬৬ হাজার টাকা নেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মিজানুর ৪০ জনের কাছ থেকে মেডিকেল ফি বাবদ ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়েছেন এবং ২৩ জনের জরুরি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বাবদ ৯২ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। কসোভো দূতাবাস থেকে একটি টিম বিদেশ যেতে আগ্রহীদের সাক্ষাৎকার নিতে আসবে বলে গত শুক্রবার পার্লামেন্ট ক্লাবের দ্বিতীয়তলায় মেটসেফ রেস্টুরেন্টে বসে ১৫ জনের কাছ থেকে ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন।
সাক্ষাৎকারের সময় দূতাবাসের কোনো টিম না থাকায় লোকজন মিজানুরকে সন্দেহ করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা জানতে পারেন, মিজানুর ভুয়া এমপি এবং সাক্ষাৎকার বোর্ডে কসোভো দূতাবাসের প্রতিনিধি পরিচয়ে থাকা নারী তার স্ত্রী মৌটুসি রহমান।