মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের সামনে থেকে ময়লার ভাগাড় অপসারণের দাবিতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ডাকে টানা তৃতীয় দিনের মতো ক্লাস বর্জন চলছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কলেজের সব ক্লাস বর্জন করে কলেজের ভেতরেই অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা। কলেজ ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষের সামনে ক্লাস বন্ধের পোস্টার লাগিয়ে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
আজ সকালে ওই কলেজের ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, কলেজের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের সামনে ‘কলেজের সামনে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধের দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করা হলো’ লেখা–সংবলিত পোস্টার লাগাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। কলেজের প্রবেশদ্বার, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়েছে এই পোস্টার। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা হাতে মাইক নিয়ে তাঁদের দাবিগুলো জানাচ্ছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সাহেদ আহমেদ বলেন, ‘আজ টানা তিন দিন ধরে আমরা কলেজের সামনে থেকে ময়লার ভাগাড় অপসারণের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করছি। এর আগেও একদিন ক্লাস বর্জন করা হয়েছে। আমাদের কর্মসূচিতে এখন অবধি কলেজের বাইরের কেউ এসে আমাদের কোনো আশ্বাস দেয়নি। আমরা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কত কষ্ট করে ময়লার দুর্গন্ধ সহ্য করে ক্লাস করছি, কলেজে আসা–যাওয়া করছি—সেটা কেউ বুঝল না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে যাব না।’
শ্রীমঙ্গলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে ময়লার ভাগাড় সরানোর দাবিতে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা
কলেজের শিক্ষার্থী উম্মে নাফিসা মাইমুনাহ বলেন, দীর্ঘদিন পর বৃষ্টি হওয়ায় ভাগাড় থেকে প্রচুর দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এতে তাঁরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন। এদিকে ভাগাড়ের কারণে কলেজের আশপাশে কুকুরের উৎপাত বেড়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই আন্দোলন চলছে। কলেজের সব শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়েছেন। ২১ মে কলেজের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। এর আগে প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো আশ্বাস না পেলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায়ও অংশ নেবেন না। দাবি মেনে নেওয়া না হলে আমরণ অনশনসহ বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শ্রীমঙ্গলে ময়লার ভাগাড় অপসারণের দাবিতে মহাসড়কে শিক্ষার্থীরা
ময়লার ভাগাড় স্থানান্তরের বিষয়ে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মহসিন মিয়া গতকাল বুধবার বলেন, ‘কলেজ সড়কের ভাগাড়টি পৌরসভার জন্মলগ্ন থেকেই। যখন এখানে ময়লার ভাগাড় হয়, তখন এখানে ঘরবাড়ি, মাদ্রাসা কিচ্ছু ছিল না। এখন এই জায়গার আশপাশে স্কুল–কলেজ–মাদ্রাসা, বাড়িঘর হয়েছে। আমরা এসব বিষয় চিন্তা করে পৌরসভার ময়লার ভাগাড় সরানোর চিন্তা করি। তখন ময়লার ভাগাড় সরানোর কোনো আন্দোলন হয়নি। তবুও সবার কথা ভেবে আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ করেছি। কিন্তু সেখানে আমাদের ময়লার গাড়ি যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আদালতে মামলা দিয়ে ময়লার ভাগাড়ের কাজ করতে দিচ্ছে না। মামলা–জটিলতার কারণে আমরা ময়লার ভাগাড় স্থানান্তর করতে পারছি না। আমরাও চাই এই ময়লার ভাগাড় স্থানান্তর করা হোক।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজীব মাহমুদ মিঠুন বলেন, ময়লার ভাগাড় অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনের কথা তিনি শুনেছেন। তিনি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন। তবে এখানে কিছু আইনি জটিলতা আছে। সংসদস সদস্য এখন দেশের বাইরে আছেন। সংসদ সদস্য দেশে এলে তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তিদের নিয়ে সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান।