সুনামগঞ্জে নদী ও হাওরে পানি বাড়ছেই, বৃষ্টি কমলে পরিস্থিতির উন্নতির আশা

0
109
বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। আজ দুপুরে শহরের উত্তর আরপিননগর এলাকার সুরমা নদীর তীরে

সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত আছে। এতে পানি বাড়ছে জেলার সব নদী ও হাওরে। ফলে জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে বৃষ্টি কমলে পরিস্থিতির অবনতি হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৬টায় এখানে পানি ছিল বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপরে। গতকাল সকাল ৯টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ১৭০ মিলিমিটার। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছিল ৩৩২ মিলিমিটার।

বৃষ্টি কিছুটা কম হলেও উজানের পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এতে জেলার কয়েকটি উপজেলায় পানি বেড়ে দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা। এসব উপজেলায় মানুষের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ না করলেও গ্রামীণ রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।

টানা বর্ষণ ও উজানে ঢলে জেলার সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, শান্তিগঞ্জ উপজেলায় পানি বেড়েছে। ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার পাশাপাশি জাদুকাটা, বৌলাই, রক্তি, কুশিয়ারা, চলতি, পাটলাই, নলজুর, খাসিয়ামারা, কালনীসহ সব নদ-নদীর পানিই বাড়ছে। হাওরগুলো এখন পানিতে টইটম্বুর। বন্যা পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে ছাতক, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এখনো কেউ সেখানে আশ্রয় নেননি।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মুক্তিখলা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল গণী আনসারী বলেন, ‘বৃষ্টি তো থামছে না। সঙ্গে ঢল নামছে। বৃষ্টি ও ঢল নামতে থাকলে বন্যা হয়ে যাবে।’ শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নূর হোসাইন জানান, পানি বাড়লেও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। নিচু এলাকার কিছু ঘরবাড়ির আঙিনায় পানি আছে। ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ মুর্শেদ বলেন, রোববারের চেয়ে সোমবার পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা কমেছে। মানুষের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেনি। কিছু রাস্তাঘাটে পানি আছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি উপজেলার কোথাও তৈরি হয়নি।

ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, ছাতকে আর এক ফুটের মতো পানি বাড়লেই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে প্রশাসনের কর্মকর্তা, সব পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টির কারণেই জেলার নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। যেহেতু সবখানেই এখন পানি আছে, তাই ছোট আকারের একটা বন্যা হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টা হালকা ও মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। বৃষ্টি কমলে পানিও কমবে।

জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ভারী বৃষ্টি না হলে হয়তো পরিস্থিতি খারাপ হবে না। তবে বন্যার পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখন যে অবস্থা, সেটা হাওর এলাকার জন্য অনেকটা স্বাভাবিক বলা যায়।

সুনামগঞ্জে গত বছর জুন মাসে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিল। অতিবর্ষণের সঙ্গে উজানের ঢল নেমেছিল কয়েক দিন। শহরে ঢলের পানি ঢুকে গত বছরের ১৬ জুন সকালে। সন্ধ্যা নামার আগেই পুরো শহর প্লাবিত হয়ে যায়। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে সুনামগঞ্জ। বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট সেবা। উঁচু ভবন, আত্মীয়স্বজনের বাড়িঘর, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেন হাজারো মানুষ। সরকারি হিসাবে, ওই বন্যায় জেলার কম-বেশি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। মারা যান ১৫ জন। ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয় ৫০ হাজার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.