মেসিদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করা কে এই সৌদি গোলরক্ষক

0
180
বাজপাখি হয়ে গোল বাঁচাচ্ছেন সৌদি গোলরক্ষক আল–ওয়াইস, ছবি: এএফপি

৩১ বছর বয়সী আল-ওয়াইস ক্যারিয়ারের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন সৌদি আরবের দুই ক্লাব আল-শাবাব ও আল-আহলিতে খেলে। কিছুদিন আগে যোগ দিয়েছেন সৌদি আরবের আরেক ক্লাব আল-হেলালে। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার এই গোলরক্ষক দেশের হয়ে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৪৩ ম্যাচ, ছিলেন রাশিয়ায় ২০১৮ বিশ্বকাপের দলেও। তবে জাতীয় দলের হয়ে সম্ভবত ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় ম্যাচটা খেলেছেন আজ।

লুসাইল স্টেডিয়ামে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ওয়াইস আসল জাদু দেখিয়েছেন। তবে এর আগে প্রথমার্ধের শুরুতে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আজকের দিনটি তাঁর হতে যাচ্ছে। ম্যাচের দুই মিনিটে লিওনেল মেসির শট অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ঠেকান সৌদি গোলরক্ষক।

আল–ওয়াইসের উদ্‌যাপন

আল–ওয়াইসের উদ্‌যাপন
ছবি: এএফপি

এরপর ম্যাচের ১০ মিনিটের মাথায় রীতিমতো লিওনেল মেসির সঙ্গে চোখে চোখ রেখে পেনাল্টি ঠেকাতে দাঁড়িয়েছিলেন ওয়াইস। লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে ডি-বক্সের ভেতর ফেলে শুরুতেই আর্জেন্টিনাকে পেনাল্টি উপহার দেয় সৌদি আরব। পেনাল্টি নিতে এগিয়ে আসেন মেসি।

আর তখনই আঙুল দিয়ে ইশারা করে মেসিকে পেনাল্টি কোথায় নেবেন তা দেখিয়ে দেন সৌদি গোলরক্ষক। মেসির সঙ্গে ‘মাইন্ড গেম’ খেলতে গিয়ে ওয়াইস ডান দিকে শট নেওয়ার জন্য ইশারা করেন। মেসি অবশ্য কথা শুনেছেনও বটে। আর্জেন্টাইন তারকা শটটা ডান দিকেই নিয়েছিলেন। তবে আল ওয়াইস নিজেই ঝাঁপটা দেন উল্টো দিকে। সে যাত্রায় বোকা বনে গেলেও, মেসি এমনকি ওয়াইস নিজেও জানতেন না এরপর কী ঘটতে যাচ্ছে।

প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার তিনটি গোল অফসাইডের ফাঁদে পড়ে নষ্ট হওয়ার দ্বিতীয়ার্ধে দেখা গেছে সৌদি ‘শো’। আর লুসাইলে লাতিন জায়ান্টদের স্তব্ধ করে আরব বসন্ত নামানোর অন্যতম রূপকার ছিলেন গোলরক্ষক ওয়াইসও। ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে হুলিয়ান আলভারেজর সেই প্রচেষ্টার কথায় ধরা যাক। আলভারেজ দারুণ একটি হেড নিয়েছিলেন, তবে দুর্দান্ত ডাইভে সেই প্রচেষ্টা রুখে দিয়ে আর্জেন্টিনার অঘটনের হার নিশ্চিত করেন এই গোলরক্ষক।

গোল বাঁচাতে এদিন ওয়াইস এতটাই মরিয়া ছিলেন যে অতিরিক্ত সময়ে নিজ দলের ডিফেন্ডার ইয়াসের আর-শাহরানিকেই হাঁটু দিয়ে আঘাত করে বসেন ওয়াইস। সতীর্থকে দুর্ঘটনাবশত আঘাত করার পরও হৃদয়স্পর্শী একটি ঘটনারও জন্ম দেন ওয়াইস। সে সময় হতাশায় তাঁকে মাথা নিচু করে উপুড় হয়ে থাকতে দেখা যায়।

তবে এদিন সবকিছু ছাপিয়ে গেছে তাঁর অতিমানবীয় কিছু সেভ। গোলবারের নিচে চীনের প্রাচীর হয়ে ওঠা ওয়াইস নিজের আত্মা, শরীর—সবকিছুই যেন সঁপে দিয়েছিলেন। বাজপাখির দক্ষতায় এদিন নিরাশ করেছেন নিকোলাস তালিয়াফিকো, মেসি এবং আলভারেজের একের পর এক প্রচেষ্টাকে।

অতিরিক্ত সময়ে আলভারেজকে নিরাশ করার পর ৮৪ মিনিটে ঠেকান দি মারিয়ার ক্রস থেকে আসা মেসির হেড। আর ৬৩ মিনিটে  হতাশ করেন ওয়াইস তালিয়াফিকো। দ্বিতীয়ার্ধে বলকে পোস্ট পেরোতে না দিতে যা কিছু করা দরকার, সম্ভাব্য সবকিছুই করেছেন এই আল হিলাল গোলরক্ষক। সঙ্গে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঘটনগুলোর একটির অন্যতম নায়কও হয়েছেন ওয়াইস।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.