পার্বত্য অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য বনভন্তের অবদান চির স্মরণীয়। আর বনভন্তের আর্বিভাবের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যে মানুষটি একান্ত সেবা প্রদান করেছেন সেই উপাসিকা সমীরা দেওয়ান(রুচিরা মা)। ১৯৭৭সাল হতে রাজবন বিহারের সেই বেড়ার বনকুটির থেকে ঐশ্বর্যময় দালান পর্যন্ত আজ অবদি সাক্ষী রয়েছেন এবং নিরবে কাজ করে চলেছেন উপাসিকা রুচিরামা। আজ সেই ধর্ম প্রাণ মহিয়সী নারীর শুভ জন্মদিন। প্রর্থনা করি তাঁর নিঃরোগী শতবর্ষ আয়ু হোক । প্রভাত আলো ও এফআইটিভি পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। জন্মদিনের কেকটি উপহার দিয়েছেন তাঁর বড়মেয়ে রুচিরা দেওয়ান।

পার্বত্য চট্টলার মাইনী নদীর অববাহিকায় অপরুপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি নদীর কুলকুল ধ্বনি আর পাখির কলকাকলিতে মুখরিত দীঘিনালার ছায়া সুশীতল কবাখালী মিলনপুর গ্রামে এক শুভক্ষণে জন্ম গ্রহন করেন এই সমীরা দেওয়ান (রুচিরা মা)। ১৯৪৮সাল ২৪শে আগষ্ট এবং ৮ই ভাদ্র মাস বাংলায় তাঁর জন্ম। পিতা নির্মল চন্দ্র মাস্টার ও মাতা বীরবালা দেওয়ানের প্রথমা কন্যা তিনি। চার ভাই পাঁচবোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। এলাকায় রাণী নামে অধিক পরিচিত। তাঁর আরো এক নাম রয়েছে বেণু বারতা। ১৯৬৭সাল তখন মেট্রিকুলেশন/এসএসসি পরীক্ষার্থী, পরীক্ষার আগ মুর্হুতে বিয়ে হয়ে যায়। রাঙ্গামাটির শহরতলীতে কালিন্দীপুর গ্রামে হেডম্যান পুলিন বিহারী দেওয়ানের ছেলে অসীম দেওয়ানের সাথে। স্বামী অসীম দেওয়ান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি অবসরে যাওয়ার পর পরলোকগত হয়েছেন। তাঁর এক ছেলে রাজেশ দেওয়ান ও এক মেয়ে রুচিরা দেওয়ান। মেয়েটা বড় তাই তিনি রুচিরামা নামে অধিক পরিচিত।

বনভন্তেকে সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন দিঘীনালায় ১৯৫৯ সালে থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত এবং রাঙ্গামাটিতে ১৯৭৭ সাল হতে ২০১২ সাল পর্যন্ত। সুদীর্ঘ ৪৪বছর বনভন্তের সেবা অতিবাহিত করেছেন। আজ বয়সের ভারে ও রোগে জর্জিত। কেউ মনে রেখেছে, কেউ খোঁজ খবর রাখেনি আর। তারপরও তিনি বনবিহারের উপাসিকা ঘরে কয়েকজন উপসিকা নিয়ে জীবন যাপন করছেন।

তিনি তিনটি বই লিখেছেন। প্রথমটি হলো মহাসংঘদানের ইতিহাস। বৌদ্ধ সমাজে মহাসংঘদান আগে কোথাও ছিল না। পার্বত্য অঞ্চলে বিরাজমান পরিস্থিতিতে ১৯৮৬ সালে বিভিন্ন হত্যা, গণহত্যার শিকার হয়ে অগণিত মানুষ মারা যায়। সে সময় বনভন্তেকে তাদের উদ্ধার করা যাবে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন মহাসংঘদান করলে তাদের উদ্ধার করা যাবে। তখন তিনি তা আয়োজনের জন্য আর্শিবাদ প্রর্থনা করেন এবং বনভন্তে সঙ্গে সঙ্গে অনুমোদন করেন। সেই থেকে মহাসংঘদানের সৃষ্টি হয় পার্বত্য অঞ্চলে বিশেষ করে রাজবন বিহারে।

দ্বিতীয় বইটি হলো বনভন্তের অবদান। এত দিন যাবৎ পার্বত্য অঞ্চলে বনভন্তের আর্ভিভাব হলে জনমানুষের জন্য কি কি উপকার করেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে বনভন্তেকে দেখা আর উপলব্দি করাটা নিজের মত করে লিখেছেন তিনি এই বইয়ে।
তৃতীয় বইটি লিখেছেন স্বধর্ম পূণ্য অবদান। বনভন্তেকে নিয়ে তাঁর অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি, সাধারণ মানুষকে বনভন্তে পূণ্য অর্জনের জন্য নানাবিদ দান উৎস ও পূণ্যকর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থা করে গেছেন। এবং সহজ সরল ভাষায় বৌদ্ধ ধর্মকে নিজ ভাষা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে গেছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন নিজের মত করে এই বইয়ে।

তিনি বনবিহারের কাটাছড়ি ভাবনাকেন্দ্রের অন্যতম উদ্যোগক্তা। এখানে ১২জন ভিক্ষু সব সময় ভাবনায়রত থাকেন। সর্ব প্রথম থেকে তাদের নিয়মিত সিয়াং ও দেখাশুনা করে থাকেন। যদিও বর্তমানে বেশ কয়েকটা গ্রাম বা পাড়া হতে পালা সিয়াং দিয়ে থাকেন, তথাপি মাসের আরো কয়েকটা দিন এখনও তিনি নিয়মিত সিয়াং দেন। সেখানে ১২ একর জায়গা ক্রয় করে সাধারণের জন্য ভাবনা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বর্তমানে মোরঘোনায় বনভন্তের স্মৃতি মন্দিরের রংয়ের কাজ(ভিতর ও বাহির) এবং চারিপাশ্বে রিলিংয়ের ব্যবস্থা কাজ নিজে উদ্যোগ নিয়ে সম্পন্ন করেছেন। আরো কিছু উন্নয়ন কাজ চলছে সেখানে। কেউ পূণ্য কাজে অংশ গ্রহন করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন। তার মোবাইলটি দেওয়া হলো-০১৫৫৬৫৩৪৩১১।